যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ওপর আবার বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। নতুন সরকার গঠনের তিনদিনের মধ্যেই ইসরায়েলি বিমান বাহিনী গাজা উপত্যকায় এ বিমান হামলা পরিচালনা করে। বুধবার(১৬ জুন) ভোরে এই হামলা চালানো হয়। তবে এ হামলায় এখন পর্যন্ত হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি। খবর বিবিসি ও আল-জাজিরার।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সকালে গাজা থেকে ডিভাইসযুক্ত গ্যাসীয় বেলুন পাঠানো হয় ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের দিকে। ইসরায়েলের ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ওই বেলুনের কারণে সেখানকার বেশ কিছু স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০টির মতো বেলুন গাজা সীমান্তবর্তী এলাকায় ভূপাতিত করা হয়।
রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বলেছে, মঙ্গলবার পূর্ব জেরুজালেমে ইহুদি জাতীয়তাবাদীদের শোভাযাত্রা ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয় ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে। ওই শোভাযাত্রার জবাব দেওয়া হবে বলে আগেই হুমকি দিয়ে আসছিল গাজার নিয়ন্ত্রণকারী হামাস।
ফিলিস্তিনি এলাকা থেকে বিস্ফোরক বেলুন ছোঁড়ার জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স বলছে, গাজা সিটি এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে হামাসের সশস্ত্র স্থাপনায় হামলা করেছে তাদের যুদ্ধবিমান। তারা ‘সব পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছে, গাজার ধারাবাহিক সন্ত্রাসী হামলা নস্যাৎ করতে প্রয়োজনে আবারও লড়াই শুরু করা হবে’।
ফায়ার সার্ভিসের বরাত দিয়ে সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, গাজা থেকে বেলুন পাঠানো হয়েছে, যেগুলো থেকে গাজা সীমান্তের কাছে ইসরায়েলি সম্প্রদায়ের উন্মুক্ত ক্ষেতগুলোতে অন্তত ২০টি অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।
ইসরায়েলের আক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করে হামাসের মুখপাত্র বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা তাদের ‘সাহসী প্রতিরোধ চালিয়ে যাবে এবং জেরুজালেমের ওপর তাদের অধিকার ও পবিত্র স্থানগুলো রক্ষা করবে’।
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজা ও খান ইউনিসে হামাসের সামরিক কমপ্লেক্স ও ব্রিগেড সভার স্থানগুলোতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তবে এসব হামলায় হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি।
এর আগে গত ২১ মে টানা ১১ দিনের সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল ও হামাস। ওই সংঘাতে প্রায় ২৫৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। এর মধ্যে ৬৬ জনই শিশু। অপরদিকে দুই হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। এছাড়া ইসরায়েলে রকেট হামলায় ১২ জন নিহত হয়েছে। তবে হতাহতদের মধ্যে বেশিরভাগই সাধারণ নাগরিক।
২১ মে যুদ্ধবিরতির পর এই প্রথম হামলা চালালো দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। সম্প্রতি দেশটিতে নতুন সরকার গঠন করেছে ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী ইয়ামিনা পার্টির নাফতালি বেনেট। ফলে সমাপ্ত হলো বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ১২ বছরের শাসন। জোট গঠনের শর্ত হিসেবে বেনেট ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
এর আগে অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের ওল্ড সিটিতে মঙ্গলবার পতাকা নিয়ে পদযাত্রা করেছে কট্টরপন্থী ইসরায়েলিরা। এই পদযাত্রা নিয়ে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে উত্তেজনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ১৯৬৭ সালে পূর্ব জেরুজালেম দখলের স্মরণে পতাকা হাতে পদযাত্রার মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করে ইহুদিরা।
ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো পদযাত্রার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশের দিন পালনের আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলি পুলিশ দামেস্ক গেটের দিকে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। যাতে করে ফিলিস্তিনিরা সেখানে যেতে না পারে।
নতুন এ লড়াই শুরুর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনের নাগরিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের শঙ্কাই সত্যি হলো। এক যুগ ধরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর আসনে থাকা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বিদায় নিয়েছেন গত রোববার। তবে ফিলিস্তিন প্রশ্নে অবস্থার কোনো পরিবর্তনের আশা দেখা গেল না। ক্ষমতায় আসতে না আসতেই হয়তো নিজের জানানটাই দিতে যাচ্ছেন আরও কট্টর ডানপন্থী নেতা নাফতালি বেনেট।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৩৭
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ