বর্ণবাদ ছাড়াও দ্বাদশ শতাব্দীর দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসের সাথে আরও কিছু শব্দ ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে রয়েছে। আফ্রিকার “বর্ণবাদ” শব্দটি জাতির জাতিগত বিভেদ সম্পর্কিত সরকারি ব্যবস্থাপনাই বর্ণনা করে।
যদিও ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ এবং আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বৈষম্যমূলক বিভাজনটি ১৯ শতকের ব্রিটিশ ও ডাচ সাম্রাজ্যবাদের যুগে প্রসারিত, ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত বর্ণবাদ ধারণাটি আইনে পরিণত হয়নি, যখন শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত সংসদ পৃথক সুযোগ-সুবিধার সংরক্ষণ আইন পাস করে, যা সরকারিভাবে ট্যাক্সি, অ্যাম্বুলেন্স,, বাস, ট্রেন, লিফট, বেঞ্চ, বাথরুম, পার্ক, গির্জা হল, টাউন হল, সিনেমা, থিয়েটার, ক্যাফে, রেস্তোঁরা, হোটেল, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরবর্তীকালে সরকারি জায়গাগুলিকে সরকারিভাবে পৃথক করেছে এবং শেষে একটি সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সমুদ্র সৈকতসহ উপকূলও সরকারিভাবে পৃথক করেছে।
বর্ণবাদ মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত। পেটি (সামান্য বা তুচ্ছ) বর্ণবাদ ও গ্র্যান্ড (বৃহৎ) বর্ণবাদ। এই নিবন্ধে প্রদর্শিত দক্ষিণ আফ্রিকার এই চিহ্নগুলি পেটি বর্ণবাদ হিসাবে পরিচিত।
পেটি বর্ণবাদ ছিল বর্ণবাদের সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান। এটি ছিল জাতির ওপর ভিত্তি করে সুবিধাগত বর্ণবাদ। গ্র্যান্ড বর্ণবাদ বলতে দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের ভূমি এবং রাজনৈতিক অধিকারে প্রবেশের উপর অন্তর্নিহিত সীমাবদ্ধতা বোঝায়। এগুলো ছিল সেই আইন যার কারণে শ্বেতাঙ্গদের এলাকায় কৃষ্ণাঙ্গরা বসবাস করতে পারত না। এই আইনের মাধ্যমে তখন কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানরা জনপ্রতিনিধি হবার যোগ্যতা হারায় এবং সবচেয়ে বেদনাদায়ক ব্যাপার হলো নিজ দেশেই তারা নাগরিক হিসাবে অধিকার পেত না।
বর্ণবাদী ব্যবস্থার মূল বিষয় ছিল জটিল ও তুচ্ছ সিরিজ পরীক্ষা ব্যবহার করে জাতিগতভাবে লোকজনকে বিভাজন করা। ফলাফলটি ছিল চারটি দলের একটিতে জনসংখ্যার শ্রেণিবিন্যাস: সাদা, কালো, ভারতীয় এবং বর্ণসংকর। বর্ণসংকর এবং ভারতীয় গোষ্ঠীগুলিকে আরও বিভাগে ভাগ করা হয়েছিল।
তখনকার সময়ে শ্বেতাঙ্গ কৃষ্ণাঙ্গ নির্ধারণে ‘পেন্সিল টেস্ট’ নামে এক পরীক্ষা চালানো হতো। যদি কোনো ব্যক্তি মাথার চুলে পেন্সিল রেখে মাথা ঝাঁকিয়েও ফেলতে পারত না তারা শ্বেতাঙ্গ হিসাবে পরিগণিত হতো না। পরীক্ষাগুলি প্রাথমিকভাবে চেহারার বর্ণন, মুখের বৈশিষ্ট্য, মাথার চুলের উপর ভিত্তি করে ছিল। এসব পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা যেত একটি যৌথ পরিবারেই কয়েক রকমের জাতিগত গোষ্ঠীতে শ্রেণিবদ্ধ হয়ে যেত।
প্রতি বছরই লোকজনকে পুনরায় শ্রেণিগতভাবে আলাদা করা হত। ১৯৮৪ সালে, উদাহরণস্বরূপ, ৫১৮ বর্ণসংকর মানুষকে শ্বেতাঙ্গ হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছিল, দুটি শ্বেতাঙ্গকে চীনা, একজন শ্বেতাঙ্গকে ভারতীয় হিসাবে পুনরায় শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছিল, একজন শ্বেতাঙ্গ বর্ণসংকর হয়েছিলেন এবং ৮৯ জন বর্ণসংকর কৃষ্ণাঙ্গ হয়েছিলেন।
রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কারণে জাপানিজ, তাইওয়ানিজ এবং দক্ষিণ কোরিয়ান অভিবাসীসহ কিছু গোষ্ঠী এবং তাদের বংশধরদের ‘সম্মানিত শ্বেতাঙ্গ’ হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছিল। শুধুমাত্র শ্বেতাঙ্গ গোষ্ঠী যেকোনো বিধিনিষেধ মুক্ত থাকতে পারত। অন্যান্য সমস্ত জাতিগোষ্ঠী পেটি বা তুচ্ছ বর্ণবাদের আইন ভোগ করেছে।
চিহ্নগুলির মাধ্যমে এটা স্পষ্ট হয় যে, বর্ণসংকর এবং ভারতীয়রা কিছু সুবিধা ভোগ করতে পারলেও জাতিগত সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্বটা ছিল কৃষাঙ্গ এবং শ্বেতাঙ্গের মধ্যে।
মুষ্টিমেয় জায়গায় কেবল পৃথকীকরণ আইন ফলানো হয়নি। যেমন মাদক ব্যবসায়ী ক্লাব এবং গির্জাগুলোতে। যদিও গির্জাগুলোতে পৃথকীকরণ করার জন্য কম চেষ্টা করা হয়নি! ১৯৫৭ সালে সংশোধনী আইনের অধীনে কৃষ্ণাঙ্গরা শ্বেতাঙ্গদের গির্জায় প্রবেশ করতে পারত না। তবে আইনটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অযোগ্য ছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি পি ডব্লিউ বোথা ১৯৭০ এবং ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময়ে পেটি বর্ণবাদ ছিন্ন করতে শুরু করে। কিন্তু যখন বাহ্যিক এবং আক্ষরিক বর্ণের চিহ্নগুলি বোথার অধীনে অপসারণ করা শুরু হয়েছিল, কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে বর্বরতার মাত্রা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৯৯৪ সালে বর্ণবাদী ব্যবস্থার অবসানের পরে, বোথাকে জাতির সত্য ও পুনর্মিলন কমিশনের অধীনে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার জন্য দায়ী করা হয়েছিল। তবে তার কোনও অনুশোচনা নেই বলে জানিয়েছিলেন।
ছবিতে ছবিতে তৎকালীন বর্ণবাদ বা পৃথকীকরণ আইনের সুস্পষ্ট দলিল-
সূত্র: Rare Historical Photos
আপনার মতামত জানানঃ