ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঘোষণা দিয়েছেন, তার দেশের সেনাবাহিনী আর পশ্চিম আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে ইসলামপন্থি উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাখোঁ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি এই অঞ্চল থেকে সৈন্য কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আরও সংগঠিতভাবে আন্তর্জাতিক ময়দানে ফিরবে আমাদের সেনারা। এ লক্ষ্যে আফ্রিকা ও ইউরোপে আমাদের মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা হবে। বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েকশ’ সেনাকে নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালিয়ে যাবো আমরা। একইসঙ্গে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করবে আরেকটি দল।’
স্থানীয় সরকার এবং সেনাকে সাহায্য করার জন্য কি আরো কিছুদিন সেখানে ফরাসি সেনা থাকবে? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব দেননি মাক্রোঁ। তবে জানিয়েছেন, কবে সেনা ফেরানো হবে, সেই টাইমলাইন এখনো তৈরি হয়নি। তবে কাজটি দ্রুত করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ফ্রান্সের পাঁচ হাজার ১০০ সেনা আছে সাহেলে। জার্মানির সেনা আছে ৪৫০ জন। এছাড়াও বিশ্বের আরো বেশ কিছু দেশের সেনা আছে সেখানে। ফ্রান্স সেনা সরিয়ে নিলে বাকি দেশগুলি কী করবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এক সময় মালি ছিল ফরাসি কলোনি। ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চলতি মাসের শেষ নাগাদ পুরো বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
মাখোঁ বলেন, সাহেল অঞ্চলের দেশগুলোর সরকারের সঙ্গে আর কাজ করবে না ফ্রান্স। উগ্রবাদীদের সঙ্গে দেশগুলোর সরকার অব্যাহত যোগাযোগ রেখে চলেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বর্তমানে পশ্চিম আফ্রিকার পাঁচ দেশ- বুরকিনা ফাসো, শাদ, মালি, মৌরিতানিয়া ও নাইজারে মোতায়েন রয়েছে ৫ হাজার ১০০ ফরাসি সেনা।
শাদের রাজধানী এনজামেনা থেকে এই সেনা অভিযান পরিচালনা করছে প্যারিস। শুষ্ক আবহাওয়ার সাহেলের বিস্তীর্ণ এলাকায় গত কয়েক বছরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে উগ্রবাদীরা। এ অবস্থায় নিরাপত্তা ফেরাতে অঞ্চলটিতে সেনা পাঠায় সাবেক উপনিবেশ স্থাপনকারী রাষ্ট্র ফ্রান্স।
সংঘাতপ্রবণ সাহেলের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় অনেক সশস্ত্র গোষ্ঠীর পাশাপাশি আইএস, আল-কায়েদার মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধেও লড়াই করছে ফ্রান্সের সেনারা। এ অবস্থায় নিরাপত্তা অভিযানে ফ্রান্সকে সহযোগিতার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোকে গত কয়েক বছর ধরে চাপ দিয়ে আসছে মাখোঁ সরকার।
২০১৩ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া সেনা অভিযানে ইতি টানতে ফ্রান্সের ভেতরেই চাপের মুখে প্রেসিডেন্ট মাখোঁ। আর সাহেল অঞ্চলে সাবেক ঔপনিবেশিক শাসক হিসেবে ফ্রান্সের সেনাদের উপস্থিতি চান না খোদ আফ্রিকার অনেক মানুষ ও রাজনীতিকরা।
মাখোঁর এ ঘোষণার পর শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাওয়া জি-সেভেন জোটের শীর্ষ সম্মেলনের অন্যতম আলোচ্য সাহেল অঞ্চলের নিরাপত্তা ইস্যু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যে তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনে অংশ নেবেন বিশ্বের শীর্ষ সাত অর্থনীতির দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান।
রোববার জে-সেভেন সম্মেলন শেষে সোমবার নেতারা ব্রাসেলসে যোগ দেবেন আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে। পশ্চিমা বিশ্বের রাজনীতিতে এবং বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে সারা বিশ্বের নিরাপত্তার প্রশ্নে সাহেল অঞ্চল অন্যতম বড় ঝুঁকির জায়গা। কারণ অঞ্চলটিতে উগ্রবাদীদের তৎপরতা দিন দিন বাড়ছে এবং অস্ত্র ও মানুষ পাচারের পথ হয়ে উঠেছে অঞ্চলটি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সাহেল থেকে ফরাসি সেনাদের প্রত্যাহারের ইচ্ছা জানিয়েছিলেন মাখোঁ। একইসঙ্গে এ পদক্ষেপের ফলে অঞ্চলটিতে সম্ভাব্য অস্থিরতার বিষয়ে সতর্কও করেছিলেন তিনি।
অঞ্চলটির নিরাপত্তায় আরও বড় আঘাতের শংকায় সে সময় ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে বুরকিনা ফাসো, শাদ, মালি, মৌরিতানিয়া ও নাইজারের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা মাখোঁর সেনা প্রত্যাহার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।
এরপরই শাদের প্রেসিডেন্ট ও ফ্রান্সের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইদ্রিস ডেবি ইটনো যুদ্ধক্ষেত্রে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন। অন্যদিনে মালিতে নয় মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় অভ্যুত্থানের পর জোরপূর্বক ক্ষমতায় আসে সেনাবাহিনী। এর প্রতিবাদে মালির সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান স্থগিত এবং সব ধরনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বন্ধ ঘোষণা করে ফ্রান্স।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০১৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ