কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে আদালতকে জানিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। আজ রোববার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল প্রতিবেদন জমা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তবে তিনি বলেন, ‘মেডিকেল রিপোর্ট জমা হওয়ার কথা শুনেছি। তবে তাতে কী আছে আমি বলতে পারছি না।’
এ প্রসঙ্গে আদালত সূত্র বলছে, গত ২০ মার্চ ঢামেক হাসপাতালের নাক-কান-গলা (ইএনটি) বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমি, অর্থোপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. ফখরুল আমিন খান ও মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. হাফিজ সর্দার প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, কার্টুনিস্ট কিশোরের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে কিশোরের মন্তব্য
এদিকে শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি, এ প্রসঙ্গে কাটুনিস্ট কিশোর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেখেন, এখানে আমি কী বলবো? আমার কিছু বলার নেই। আমাকে যখন ধরে নিয়ে যায়, তখন আমি সুস্থ ছিলাম। একজন সুস্থ সবল কর্মঠ মানুষ পরিশ্রম করে এদেশে বেঁচে ছিলাম। এখন আমার যা যা সমস্যা হয়েছে নির্যাতন করার কারণে হয়েছে। কীভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তা আমি জামিনে মুক্ত হওয়ার পর গণমাধ্যমের সামনে বিস্তারিত বলেছি। আমার বলা একটি কথাও অসত্য না। ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। সেখানে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি দিয়ে আমাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা করা হয়েছে।
আঘাত করে আমার ফাটিয়ে দেয়া কানে বিশেষ ধরনের একটি যন্ত্র বসানো হয়েছে। তবুও কান কিন্তু পুরোপুরি ঠিক হয়নি। কোনো সুস্থ মানুষের কানে এমন যন্ত্র বসানো হয়? কোনোদিন শুনেছেন? কানের ভেতরে সেই যন্ত্র তো এখনো আছে। ল্যাবএইডের ডাক্তাররা পরীক্ষা করেছে, আঘাত অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়েছে। এখনো চিকিৎসার মধ্যেই আছি। পায়ের ব্যথায় এখনো ঠিকমত হাঁটতে পারি না। পায়ের ব্যথা তো আঘাতের কারণেই। চোখে একটি অপারেশন হয়েছে, সম্ভবত আরও একটি অপারেশন করতে হবে। শুধু নির্যাতন-আঘাতের চিহ্ন নয়, দানবীয় আঘাতের যন্ত্রণা নিয়েই বেঁচে আছি। মেডিকেল বোর্ড কেন এসব দেখতে পেলেন না, কেন আঘাতের চিহ্ন খুঁজে পেলেন না, তারা বলতে পারবেন। এ বিষয়ে আমার প্রতিক্রিয়া দিয়ে কী হবে!’
নির্মম নির্যাতনের শিকার কিশোর
কার্টুন আঁকার অপরাধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হয়ে ৩০০ দিন কারাবন্দি থাকার পর গত ৩ মার্চ কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। পরদিন ৪ মার্চ তিনি কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান।
কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর গত ১০ মার্চ আদালতে হাজির হয়ে হেফাজতে থাকাকালে নির্যাতনের শিকার হওয়ার বর্ণনা দেন কিশোর। কিশোর জানান, গত ৫ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হলেও ২ মে আনুমানিক পৌনে ৬টার সময় ১৬ থেকে ১৭ জন সাদা পোশাকধারী লোক তাকে কাকরাইলের বাসা থেকে জোর করে হাতকড়াসহ মুখোশ পরিয়ে অচেনা নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। করোনা নিয়ে তার আঁকা কিছু কার্টুন দেখিয়ে কেন এঁকেছে এবং কার্টুনের চরিত্রগুলো কারা প্রশ্ন করা হয়।
তিনি বলেন, ‘এক পর্যায়ে প্রচণ্ড জোরে আমার কানে থাপ্পর মারে। কিছুক্ষণের জন্যে আমি বোধশক্তিহীন হয়ে পড়ি। বুঝতে পারছিলাম আমার কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। তারপর স্টিলের পাত বসানো লাঠি দিয়ে পায়ে পেটাতে থাকে। যন্ত্রণা ও ব্যথায় সজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলাম। বর্তমানে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ, কান দিয়ে পুঁজ পড়ে, হাঁটতে পারি না, হঠাৎ করে পড়ে যাই। এবং শরীরে আরও নানাবিধ রোগের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।’
গত বছরের মে’তে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদকে রাজধানীর কাকরাইল ও লালমাটিয়া থেকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। কিশোর ও মুশতাকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রমনা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে থানা হাজতে মুশতাক মারা যান।
এদিকে, মুক্ত হবার পর রাজধানীর একটি হাসপাতালে কিশোরের ডান কানে অস্ত্রোপচার করা হয়। এ প্রসঙ্গে কিশোরের বড় ভাই, লেখক আহসান কবির সে সময় বলেন, ‘কিশোরের ডান কানে অস্ত্রোপচার (টিমপ্যানিক মেমব্রেন রিপেয়ার মাইরিংগোপ্লাসটি) করা হয়েছে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি যন্ত্র বসানো হয়েছে। এটা বসানোর পর তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে অবস্থা ভালোর দিকে গেলে সেটা অটোমেটিকেলি বের হয়ে আসবে। অন্যথায় চিকিৎসকরা অবস্থা পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।’
এসডব্লিউ/এসএস/২০৪২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ