বাংলাদেশের শীর্ষ সংবাদপত্র দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে সরকার চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্ভীক সাংবাদিকতা, দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্বে প্রথম আলো দেশজুড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে। পত্রিকাটির সংবাদ প্রকাশের ধরন ক্ষমতাসীন দলের পছন্দ নয়। ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদে পত্রিকাটির সম্পাদকের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখতে দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের। এখন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নাইমুল আবরারের মৃত্যুর মামলায় মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে বলে পত্রিকাপক্ষের অভিযোগ।
অভিযোগ গঠনের আদেশের ব্যাপারে প্রথম আলোর সম্পাদকের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মতিউর রহমানসহ অপরাপর আসামিদের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছিলাম। যেদিনকার ঘটনায় এই মামলা, সেদিন প্রথম আলোর সম্পাদক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। তাই আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম তিনি অব্যাহতি পাবেন।’ তিনি বলেন, অভিযোগ গঠনের এই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।
১২ নভেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার ঢাকার রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র নাইমুল আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এই আদেশ দেন। কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হককে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন আদালত। আগামী ১৪ ডিসেম্বর মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করা হয়েছে।
নাইমুল আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটি টর্ট আইনে বিচারযোগ্য। কোনোভাবেই ফৌজদারি অপরাধের মধ্যে পড়ে না। নালিশি মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষীর তালিকা একান্ত প্রয়োজন। অথচ এই মামলার আরজিতে কোনো সাক্ষীর তালিকা নেই। নালিশি মামলায় শুধু প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে আসামি করা হয়।
অভিযোগ গঠনের সময় আদালতে উপস্থিত প্রথম আলোর সম্পাদকসহ বিবাদীরা আদালতের কাছে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। আদালতে প্রথম আলোর সম্পাদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী ও প্রশান্ত কুমার কর্মকার। বাদীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী ওমর ফারুক।
গত বছরের ১ নভেম্বর ঢাকার রেসিডেনসিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে কিশোর আলোর বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান ছিল। সেদিন মাঠে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় নাইমুল আবরার। এ ঘটনায় নাইমুলের বাবা মজিবুর রহমান গত বছরের ৬ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে নালিশি মামলা করেন। এরপর চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি প্রথম আলো সম্পাদক, কিশোর আলো সম্পাদকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ।
১৩ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়। ওই দিন প্রথম আলো, কিশোর আলোর সম্পাদকসহ আটজনের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করা হয়। ওই দিন আদালত ২৭ অক্টোবর আদেশের দিন ধার্য করেন। পরে ২৭ অক্টোবর আবার আদেশের দিন ধার্য করা হয় ১২ নভেম্বর।
বৃহস্পতিবার অভিযোগ গঠনের আদেশের পর প্রথম আলোর সম্পাদকের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী সাংবাদিকদের বলেন, এই মামলা যে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, তা শুনানিতে তাঁরা আদালতে তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেন, নাইমুল আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় প্রথমে মোহাম্মদপুর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়। ওই মামলা থাকা অবস্থায় ঘটনার পাঁচ দিন পর আদালতে আরেকটি নালিশি মামলা করা হয়। নালিশি মামলার আদেশে দেখা যায়, থানায় করা অপমৃত্যুর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন না নিয়েই নালিশি মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত, যা ফৌজদারি কার্যবিধি ২০৫-এর (ডি) ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। নিম্ন আদালতের উচিত ছিল অপমৃত্যুর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর নালিশি মামলাটি আমলে নেওয়ার। এ ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নালিশি মামলা তদন্তের আদেশ দেওয়া হয়।
এহসানুল হক সমাজী বলেন, নাইমুল আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটি টর্ট আইনে বিচারযোগ্য। কোনোভাবেই ফৌজদারি অপরাধের মধ্যে পড়ে না। নালিশি মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষীর তালিকা একান্ত প্রয়োজন। অথচ এই মামলার আরজিতে কোনো সাক্ষীর তালিকা নেই। নালিশি মামলায় শুধু প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে আসামি করা হয়। অথচ সেদিন তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না।
এই মামলায় আরও যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তাঁরা হলেন প্রথম আলোর হেড অব ইভেন্ট অ্যান্ড অ্যাকটিভেশন কবির বকুল, নির্বাহী শাহপরান তুষার, নির্বাহী শুভাশীষ প্রামাণিক, কিশোর আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মহিতুল আলম, ডেকোরেশন ও জেনারেটর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের জসীম উদ্দিন, মোশাররফ হোসেন, সুজন ও কামরুল হাওলাদার।
Available for everyone, funded by readers. Every contribution, however big or small, makes a real difference for our future. Support to State Watch a little amount. Thank you.
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ