চা-পাতা ‘চুরি’ করে নেয়ার সংবাদ দিতে গিয়ে হামকার শিকার হলো চা শ্রমিকেরা। এরপর ঘটনায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বাগানে সহকারী ব্যবস্থাপকের বাংলোর সামনে ফুলের টব ভাঙচুর করায় তাদের আসামি করে মামলা দেওয়া হয়েছে।
গত শুক্রবার রাত ১০টায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সুনছড়া চা-বাগানে এ ঘটনা ঘটেছে।
সূত্র মতে, বাগানের হেড ক্লার্ককে জানানোর পর চা-পাতা ‘চোর চক্রের’ তথ্য প্রদানকারী শ্রমিকদের ওপর দুই বার সশস্ত্র হামলার অভিযোগ উঠেছে। সেসময় হামলাকারীরা শ্রমিকের বাড়ির বেড়া ভেঙে গরু, ছাগল এবং দোকানের ক্যাশ ও একটি দানবাক্স লুট করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
আহত তিন শ্রমিকদের মধ্যে দুই জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে, গতকাল শনিবার রাতে চা-শ্রমিকরা কমলগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
কী ঘটেছিল?
সূত্র মতে, ডানকান ব্রাদার্স আলীনগর এর ফাঁড়ি সুনছড়া চা-বাগানের শ্রমিক স্বপন নায়েক ও হরিনারায়ণ হাজরা ১০ নম্বর সেকশনে প্রবেশ করে একটি সশস্ত্র চক্রকে কাঁচা চা-পাতা চুরি করতে দেখে বাগানের টিলা ক্লার্ক গোপাল চক্রবর্তীকে তা জানান।
এদিকে, ক্লার্ক গোপাল চক্রবর্তী ‘চা-পাতা চোরদের’ কাছে তথ্য দেয়া শ্রমিকদের নাম বলে দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে আলীনগর ইউনিয়নের টিলাগাঁও গ্রামের মঈনুল আহমেদ রাত ৯টায় চা-বাগান বাজারে চা-শ্রমিক স্বপন নায়েক ও হরিনারায়ণ হাজরাকে মারধোর করে বেঁধে রাখেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংবাদ পেয়ে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা টিলা ক্লার্কের বাসায় গিয়ে তাকে না পেয়ে সহকারী ব্যবস্থাপকের বাংলোয় যান। সেখানে ব্যবস্থাপককে না পেয়ে বাংলোর সামনে রক্ষিত ফুলের টব ভাঙচুর করেন।
মহিলাদের মারধর, মন্দির ভাঙার হুমকি
স্বপন নায়েক, কাজল হাজরা ও হরিনারায়ণ হাজরা জানান, মঈনুল তার সহযোগী চিতলীয়া গ্রামের রশীদ উল্লা, ইব্রাহিম মিয়া, সেলিম মিয়া, মান্নান আলী, হান্নান মিয়া ও সাকেলসহ চা-পাতা ‘চোরদল’ চা-শ্রমিকদের বাড়িতে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
হামলায় চা-শ্রমিক স্বপন নায়েক (২৮), হরিনারায়ণ হাজরা (৩০) গুরুতর আহত হন। সেসময় কানাইলাল হাজরাও (২৫) সামান্য আহত হন।
হরিনারায়ণের মা রাজকুমারী হাজরা বলেন, ‘হামলাকারীরা আমার গলায় ধারালো দা ধরেছিল ও ছেলের বউদেরও মারধর করেছে। পরে তারা মন্দির ভেঙে ফেলার হুমকি দেয়।’
‘সেসময় তারা ঘরের সাতটি গরু, পাঁচটি ছাগল, দোকানের ক্যাশ থেকে নগদ ৩০ হাজার টাকা, একটি দানবাক্স লুট করে নেয়।’
হামলাকারীরা রাতে রাস্তা অবরোধ করে রাখায় আহতদের হাসপাতালে পাঠানো যায়নি। সংবাদ পেয়ে পুলিশ আসার পর রাতে আহতদের কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়।
চা-বাগানে সহ-ব্যবস্থাপকের বাংলোর সামনে ফুলের টব ও জানালার গ্লাস ভাঙচুরের ঘটনায় সহ-ব্যবস্থাপক ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে আহত হরিনারায়ণসহ সাত জনকে আসামি করে শনিবার কমলগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন।
সংশ্লিষ্টদের মন্তব্য
চা-বাগানের টিলা ক্লার্ক গোপাল চন্দ্র চক্রবর্তী বলেছেন, ‘চাপের মুখে পড়ে তথ্য প্রদানকারীর নাম বলতে হয়েছে।’
এ ব্যাপারে আলীনগর চা-বাগান ব্যবস্থাপক হাবিব আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘সংবাদ পেয়ে আমাদের স্টাফরা সেকশনে গিয়ে চা-পাতা চুরি করতে কাউকে দেখেনি। শ্রমিকরা আমাকে অভিযোগ দিলে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করতাম। তারা সহকারী ব্যবস্থাপকের বাংলোয় ভাঙচুর করেছে।’
‘বাগানের পাহারাদারদের হামলায় দুই-তিন জন শ্রমিক আহত হয়েছেন,’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তবে টিলা ক্লার্ক চা-পাতা চুরির তথ্য প্রদানকারীদের নাম বলে ঠিক কাজ করেননি।’
কমলগঞ্জ থানার ওসি ইয়ারদৌস হাসান বলেন, ‘বাংলো ভাঙচুরের ঘটনায় চা-বাগানের পক্ষ থেকে থানায় মামলা হয়েছে। তবে আহতদের ঘটনা ভিন্ন। অন্যদিকে, চা শ্রমিকরাও একটি অভিযোগ দিয়েছেন।’
এসডব্লিউ/এসএস/১৭১৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ