করোনাভাইরাস নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যেমন আতঙ্ক বিরাজ করছে, তেমনি অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও বিশেষভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। সন্তান ধারণ করেছেন বা করবেন, এমন নারীদের জন্য করোনার সংক্রমণ বিশেষ কোনো ঝুঁকি বয়ে আনে কি না, এবিষয়ে উদ্বিগ্ন থাকাটাও স্বাভাবিক। তবে নতুন এক গবেষণায় জানা গেল, গর্ভবতী নারী করোনা আক্রান্ত হলেও সন্তানের কোনো ক্ষতি নেই।
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও, সুস্থ বাচ্চা জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাড়তি জটিলতা তৈরি হয় না বলে ইসরায়েলে নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে।
‘প্রথম ও দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক কোভিড-১৯ সংক্রমণে ভ্রুণ ও মায়ের অবস্থা’ শীর্ষক এ গবেষণাটি চলতি মাসের শুরুর দিকে জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল মেডিসিনে প্রকাশিত হয়।
গর্ভাবস্থায় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই গর্ভাবস্থায় যেকোনো ফ্লু বা অন্য কোনো সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। আবার বুক–পেটের মধ্যের ডায়াফ্রাম নামক পর্দাটি এ সময় একটু ওপরের দিকে উঠে যায় বলে স্বাভাবিকভাবেও শ্বাসকষ্ট হয় শেষের দিকে, সংক্রমণের জন্য সাধারণ মানুষের তুলনায় শ্বাসকষ্ট বেশি হতে পারে।
গর্ভাবস্থার প্রথম ও দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন, এমন ৫৫ জন অন্তঃসত্ত্বা নারীর ওপর গবেষণাটি চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট। ভ্রুণের সুস্থতা, বৃদ্ধি ও গর্ভফুলের কার্যক্রমের স্বাভাবিকতা যাচাইসহ গবেষণায় আরও কিছু বিষয় মূল্যায়ন করা হয়।
গবেষণার নেতৃত্বে থাকা সেবা মেডিকেল সেন্টারের ফিটাল মেডিসিন ইউনিট, অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গায়নোকোলজির প্রধান অধ্যাপক ইয়োয়াভ ইয়িনন বলেন, ‘ওই নারীদের গর্ভাবস্থার কোনো জটিলতা, ভ্রুণের বৃদ্ধিতে কোনো প্রতিবন্ধকতা বা গর্ভফুলের কোনো জটিলতা ছিল না। বিষয়টি খুবই আশ্বস্ত হওয়ার মতো।’
গবেষণার আওতায় থাকা সব অন্তঃসত্ত্বা মা-ই নির্ধারিত সময়ে সন্তান জন্ম দেন এবং সবার বাচ্চাই জীবিত ছিল বলে জানান তিনি। এ ছাড়া, গর্ভফুলের মাধ্যমে মায়ের কাছ থেকে সন্তানের শরীরে ভাইরাস সংক্রমণের কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি গবেষণায়।
চলতি বছরের শুরুতে আক্রান্ত মায়েদের কাছ থেকে করোনা সংক্রমিত হয়ে দুটি শিশু জন্ম নেওয়ার ঘটনা ঘটে ইসরায়েলে। তবে, এ ধরনের ঘটনা খুবই বিরল এবং আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান অনুসারে এক শতাংশ বা তারও কম ক্ষেত্রে এটি ঘটে বলে জেরুজালেম পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান অধ্যাপক ইয়িনন।
এরপরও অধ্যাপক ইয়িনন অন্তঃসত্ত্বা নারীদের করোনার টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। কারণ তৃতীয় ত্রৈমাসিকে তাদের গর্ভকালীন কিছু রোগ ও জটিলতায় আক্রান্ত হওয়া আশঙ্কা থাকে, যার ফলে তাদেরকে আইসিইউতে পর্যন্ত নিতে হতে পারে। এ ছাড়া, নির্ধারিত সময়ের আগেই তাদের সন্তান জন্ম নিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন করোনার সাথে লড়তে হলে চাই সচেতনতা আর ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত পরিচ্ছন্নতাবোধ বা হাইজিন সেন্স। তারা বলেন, যেহেতু অন্তঃসত্ত্বাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নাজুক, তাই তাদের সচেতনতা বেশি দরকার। এ সময় জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। মার্কেট, মেলা, বিয়েবাড়ি ও গণপরিবহন এড়িয়ে চলুন। খুব প্রয়োজন না হলে ভ্রমণ করবেন না। অসুস্থ ব্যক্তির কাছে যাবেন না। বারবার হাত পরিষ্কার করুন। পশু–পাখি বা কাঁচা মাছ, মাংস ধরবেন না বা ধরলেও দ্রুত সাবান–পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৪৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ