নতুন চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। করোনার পাশাপাশি মিউকরমাইকোসিস বা ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের’ বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতকে। দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বাড়ছে। এ সংক্রমণের জেরে বাড়ছে মৃত্যুও। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে বাংলাদেশেও।
দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসা কেমন হবে, ব্যবস্থাপনা কেমন হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আজ রোববার দুপুরে ভার্চুয়াল বিফ্রিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম এ কথা জানান।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, এ বিষয়টি নিয়ে কোভিড–১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি যেটি আছে তারা নিজেরা আলাপ-আলোচনা করেছেন। তারাই একটি পরামর্শ চূড়ান্ত করবেন।’
‘তা ছাড়া, এ বিষয়টি নিয়ে আমরা নিজেরা কথা বলেছি। আমরা বিভিন্ন জেলাগুলোতে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসা কেমন হবে, ব্যবস্থাপনা কেমন হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন আমরা দেবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত করোনার নয়টি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছি একেবারে নিশ্চিত। জিনোম-সিকোয়েন্সিং চলছে। আমরা মনে করি, রিপোর্ট হাতে এলে সংখ্যাটি বেড়ে যাবে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ করার সক্ষমতা অনেক বেশি।’
‘কাজেই সাধারণ কোভিড-১৯ এ আমরা যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়েছি, হাত ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজ করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা এই কাজগুলো আমাদের আরও জোরে-সোরে করতে হবে। অন্যদের করার জন্য আরও বেশি করে মনে করিয়ে দিতে হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে মিক্সড ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিষয়ে আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। একটি কোম্পানির ভ্যাকসিন নিয়ে দ্বিতীয় ডোজ অন্য কোম্পানির নেওয়া বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।’
কীভাবে ক্ষতি করে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস?
মিউকরমাইকোসিস একটি বিরল সংক্রমণ। মিউকর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে এ সংক্রমণ হয়। সাধারণত মাটি, গাছপালা, পচনশীল ফল ও শাকসবজিতে এ ছত্রাক দেখা যায়।
অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এআইআইএমএস) জানিয়েছে, মিউকরমাইকোসিস মুখে আক্রমণ করতে পারে। নাক, চোখ ও মস্তিষ্কে এর সংক্রমণ ঘটতে পারে।
এ সংক্রমণে সাইনাসের ব্যথা, এক নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাথার এক পাশে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, দাঁতে ব্যথাসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। সংক্রমণে রোগী দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন।
কাদের ঝুঁকি বেশি?
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লব আগরওয়াল রাজ্য সরকারগুলোকে দেওয়া চিঠিতে লিখেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে মিউকরমাইকোসিস সংক্রমণের নতুন একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
বিশেষত, বিভিন্ন রাজ্যে করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষ, যারা স্টেরয়েড থেরাপি নিচ্ছেন ও যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তারা এ সংক্রমণে বেশি ভুগছেন। তিনি আরও বলেন, এর ফলে কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি তৈরি হয়।
এ প্রসঙ্গে এআইআইএমএস জানিয়েছে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ফুসফুসেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষত ডায়াবেটিস রয়েছে— এমন কোভিড পজিটিভ রোগীদের এ ছত্রাকে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কেননা, স্টেরয়েডের অপব্যবহার কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে মিউকরমাইকোসিসের সংক্রমণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
মিউকরমাইকোসিসের ‘স্পোর’ মাটি, বাতাস, এমনকি ফল ও সবজির মতো খাবারেও থাকে। তবে মানবদেহে এর আক্রমণের ক্ষমতা কম এবং সাধারণত সংক্রমণ ঘটায় না। কোভিডের আগে এ সংক্রমণের ঘটনা ছিল খুবই কম। এখন কোভিডের কারণে বড় সংখ্যায় সংক্রমণের খবর মিলছে।
প্রসঙ্গত, এ রোগের হাত থেকে সেরে উঠতে বিভিন্ন মাত্রিকের চিকিৎসা দরকার হয়। যেমন চোখের সার্জন, ইএনটি বিশেষজ্ঞ, সাধারণ সার্জন, নিউরোসার্জন, ডেন্টাল ফেসিয়াল সার্জন ও বিশেষ অ্যান্টি-ফাঙাল মেডিসিন অ্যামফোটেরিসিন প্রয়োজন হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫৪৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ