ব্ল্যাক ফাঙ্গাস একটি ছত্রাক-জনিত রোগ। এই ছত্রাক মাটি এবং বাতাসে এমনিতেই বিদ্যমান থাকে। এমনকি নাক ও সুস্থ মানুষের শ্লেষ্মার মধ্যেও এটি স্বাভাবিক সময়ে থাকতে পারে। ছত্রাকটি সাইনাস, মস্তিষ্ক এবং ফুসফুসকে আক্রমণ করে। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ফুসফুস যেহেতু দুর্বল থাকে, সেজন্য তাদের ক্ষেত্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
করোনা আক্রান্ত থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাসকারী তাদের কারও কারও শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের দেখা মিলছে। বাংলাদেশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস প্রথম শনাক্ত হয় চলতি বছরের ৮ মে। করোনা সংক্রমণ নিয়ে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৪৫ বছর বয়সী এক রোগীর শরীরে এই ছত্রাক শনাক্ত হয়।
ওষুৃধ পাওয়া না রোগীর জীবন আশঙ্কায় পড়ে যাবে
আজ চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো মিউকরমাইকোসিসে বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন এক নারী (৬০)। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পর তিনি বিরল এ ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত হন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের জন্য চিকিৎসকরা যে ওষুধ লিখে দিয়েছেন হাসপাতাল থেকে তা চট্টগ্রামের কোথাও নেই। এমনকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছেও নেই।
আজ বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে এক জাতীয় দৈনিককে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন চমেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুযত পাল।
তিনি বলেন, ‘চমেক হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আমরা এক নারী মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি৷ যদিও সাধারণ মানুষ রোগটিকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নামে চেনেন। ছত্রাকজনিত রোগটি বিরল। চট্টগ্রামে ওই নারীই প্রথমবারের মতো আক্রান্ত হয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। একটি মেডিকেল টিম তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।’
জানা গেছে, গত ২৫ জুলাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন ওই নারী। এরপর ১৫ জুলাই তার করোনা পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ আসে। তবে করোনামুক্ত হলেও তার শরীরে নানা অসঙ্গতি দেখা দেয়। পাঁচদিন আগে তিনি চমেক হাসপাতালে ভর্তি হন।
আক্রান্ত নারীর ছেলে বেলাল হোসাইন ওই দৈনিককে বলেন, মায়ের জন্য চিকিৎসকরা যে ওষুধ লিখেছেন তা পাওয়া যাচ্ছে না। ওষুধ না পেলে মাকে বাঁচাতে পারব না। করোনা আক্রান্ত হয়ে ২৩ জুলাই বাবা মারা গেছেন।
তিনি বলেন, মাকে অ্যামফোটেরিসিন-বি নামক একটি ইনজেকশন সোমবার থেকে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন চেষ্টা করেও কোথাও ওষুধটি পেলাম না। ওষুধটি পাওয়ার কোনো সোর্সও পাচ্ছি না। মায়ের ইনফেকশন দিন দিন বাড়ছে উল্লেখ করে
চিকিৎসকদের বরাতে বেলাল হোসাইন বলেন, ইনফেকশন যদি ব্রেইনে চলে যায় তাহলে ওনাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। ইনফেকশন ব্রেইনে যাওয়ার মতো অবস্থায় আছে। এখন যদি মাকে ওষুধটা দিতে পারতাম তাহলে ইনফেকশন বন্ধ হতো। ওষুধটা না পেলে আর কোনো চিকিৎসা নেই। যদি কেউ ওষুধটি দিয়ে হেল্প করতে পারেন, তাহলে মাকে বাঁচাতে পারতাম। যত টাকা লাগে ওষুধটি কিনে নেব।
বেলাল আরও বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তাদের কাছেও ওষুধটি নেই। চিকিৎসকরা বলেছেন তার মায়ের নাক, মুখ ও চোখে একটি অস্ত্রোপচার হবে।
হাসপাতাল সূত্রে পাওয়া, ওই রোগীর বাড়ি পটিয়া উপজেলায়। চলতি মাসের ৩ তারিখে করোনায় আক্রান্ত হন পঞ্চাশোর্ধ্ব ওই নারী। তবে ১৫ জুলাই তার করোনা নেগেটিভ আসে। এরপরও তার শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। পরে চারদিন আগে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি আগে থেকে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপসর্গ
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত রোগীদের সাধারণত যেসব উপসর্গ দেখা দেয় তার মধ্যে রয়েছে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং নাক থেকে রক্ত পড়া। চোখে ব্যথা এবং চোখ ফুলে যাওয়া। চোখের পাতা ঝুলে পড়া। চোখে ঝাপসা দেখা। নাকের চামড়ার চারপাশে কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেয়া। একটি জিনিস দুটো দেখা যায়, বুকে ব্যথা অনুভব হয়, শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয় এবং এবং সর্দি কাশির সাথে রক্ত আসে।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে সতর্কতা
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বা সিডিসি বলছে, যেসব জায়গায় অনেক বেশি ধুলোবালি রয়েছে সেসব জায়গা এড়িয়ে চলা। যদি সেসব জায়গা এড়িয়ে চলা সম্ভব না হয়, তাহলে এন৯৫ মাস্ক ব্যবহার করা। প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেসব স্থাপনা পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলোর সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
সিডিসি বলছে এসব জায়গা থেকে ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে। শরীরের চামড়ায় যাতে কোন ইনফেকশন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। কোথাও কেটে গেলে কিংবা চামড়া উঠে গেলে সেটি যাতে ধুলো-ময়লার সংস্পর্শে না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা। রোগীর স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানী হতে হবে। বারডেম হাসপাতালে রেসপিরেটরি মেডিসিনের অধ্যাপক স্টেরয়েডের ব্যবহার ডায়াবেটিসকে অনিয়ন্ত্রিত করে তুলতে পারে। ফলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমতি হবার ঝুঁকি বেশি ধাকে। রোগীকে অক্সিজেন দেবার সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বলছে, এসব সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা নিলেই যে মিউকোরমাইকোসিস সংক্রমণ এড়ানো যাবে সেটি এখনো পুরোপুরি প্রমাণিত নয়।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৮৩২
আপনার মতামত জানানঃ