পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সেখানে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বরঞ্চ সাংবাদিক রোজিনা যা করেছেন তা উচিত হয়নি, অন্যায় করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার (১৮ মে) দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ দাবি করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে কোনও শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি। এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। সাংবাদিক রোজিনা যে কাজটি করেছেন তা উচিত হয়নি। তিনি অন্যায় করেছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিক রোজিনার পূর্বের কোনও সংবাদের জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সোমবার (১৭ মে) যে ঘটনা ঘটেছে, সে ঘটনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি না বলে সরকারি ফাইল নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেগুলোর ছবি তুলছিলেন। অনুমতি ছাড়াই ওই রুমে প্রবেশ করেছেন। এগুলো রাষ্ট্রীয় গোপন বিষয়। তিনি অন্যায় করেছেন।’
একজন অতিরিক্ত সচিব সাংবাদিক রোজিনার গলা চেপে ধরেছিলেন— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হবে। তবে আমি এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি একজন অতিরিক্ত সচিব। আমাকে তিনি টেলিফোনে বলেছেন রোজিনাকে শারীরিক নির্যাতন করেননি। বরং রোজিনা তার ওপরে হামলা করেছিল। ঘটনার পর রোজিনাকে যখন আটকানোর চেষ্টা করা হয়, তখন তিনি ওই অতিরিক্ত সচিবকে খামচি দিয়েছেন, থাপ্পড় মেরেছেন।’
তিনি বলেন, সাংবাদিক রোজিনার সঙ্গে যদি কেউ অপরাধ করে তা আইনিভাবে প্রমাণ হবে। এটা সবই রাষ্ট্রের কাজ। আমরা সাংবাদিককে তথ্য দিয়ে থাকি। তবে তিনি রুমের মধ্যে ভিডিও করেছেন, এটা কি অন্যায় নয়? তবে বিষয়টি আমি ভালো জানি না, আমার আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেনেছেন। আমি ওখানে ছিলাম না। তবে তাকে আটকে রেখে কেউ নির্যাতন করেছেন, এটা আমার জানা নেই। তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হলে এটা ‘রং’। তবে তিনি যা করেছেন, এটা কি রং না?
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘সাংবাদিক রোজিনাকে ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছে এটা ভুল। ঘটনার সময় সেখানে বিভিন্ন পদস্থ পাঁচ-ছয় জন উপস্থিত ছিলেন। ঘটনার পর সেখানে পুলিশ এসেছে। ঘটনার আধঘণ্টার মধ্যে পুলিশ এসেছে। আমার আগে এ খবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেনেছেন। বরং, রোজিনা সেখানে কাউকে সাহায্য করছিল না। তাকে জোর করে কেউ রুমে নিয়ে যায়নি।’
জাহিদ মালিক বলেন, সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে যেটুকু শুনেছি, তাতে স্বাস্থ্য সচিবের পিএসের অনুপস্থিতিতে সোমবার দুপুরে তার কক্ষে ঢুকেছিলেন রোজিনা।ওখানে যে ডিউটিতে ছিল, সে দেখল যে একজন ব্যক্তি ওখানে ফাইলের ছবি তুলতেছে, ফাইল কিছু বের করে ব্যাগে ঢুকাইছে, শরীরেও ঢুকাইছে। আমাদের নারী অফিসাররা এসেছে, এসে তারা ধরেছে যে ‘আপনি কেন এইসব করছেন?’ তখন তার কাছ থেকে ওই কাগজ আর ফাইলগুলো নিয়েছে।
তিনি বলেন, এর মধ্যে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তারা এসেছে, তারা এটা টেকওভার করছে। প্লাস মোবাইলটাও নিয়েছে, মোবাইলেও অনেক ছবি পেয়েছে।
সোমবার দুপুরের পর স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম ভূঞার কক্ষে রোজিনাকে প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের একজন উপসচিব তার বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, রোজিনা যেসব নথির ছবি তুলেছেন তার মধ্যে টিকা আমদানি সংক্রান্ত কাগজপত্রও ছিল।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এই জিনিসটাও দুঃখজনক। কেননা এই ফাইলগুলো ছিল টিকা সংক্রান্ত। আমরা যে রাশিয়ার সঙ্গে টিকার চুক্তি করছি, চীনের সাথে টিকার চুক্তি করছি সেগুলো নন ডিসক্লোজার আইটেম। আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে বলেছি, আমরা এটা গোপন রাখব, এগুলো বলব না। তো সেগুলো যদি বাইরে চলে যায়, তাহলে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলাম এবং আমরা টিকা নাও পেতে পারি। এতে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য বিরাট ক্ষতি হতে পারে। এগুলো সিক্রেট ডকুমেন্ট, বাইরে যাওয়া ঠিক হয় নাই।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করায় এখন ‘অন্যায়ের’ শিকার হচ্ছেন রোজিনা-এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির রিপোর্টিংয়ের জন্য তো আজকের ঘটনা না। ওটা ওখানের ঘটনার, এর উপরই পরবর্তী ঘটনা ঘটছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৪৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ