ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত ১০ মে থেকে ইসরায়েলের বোমা হামলা শুরুর পর প্রতি ঘণ্টায় তিন জন করে শিশু হামলার শিকার হচ্ছে বলে জানিয়েছে শিশুদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সামরিক সংঘাত শুরুর পর থেকে গত এক সপ্তাহে গাজায় অন্তত ৫৮ শিশু এবং ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে দুই শিশু নিহত হয়েছে। সেভ দ্য চিলন্ড্রেনের ফিলিস্তিনের পরিচালক জ্যাসন লি জানান, আর কতো মা-বাবার বুক খালি হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্যবস্থা নেবে? শিশুরা কোথায় নিরাপদ? তাদের বাড়িতেই তো বিমান হামলা হচ্ছে? তারা পালাবে কোথায়?
তিনি আরও বলেন, গাজার অনেক পরিবার ও আমাদের কর্মীরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি দেখে তাদের হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। তাদের মনে হচ্ছে, তারা নরকে বাস করছেন। পালিয়ে আশ্রয় নেবেন এমন কোনো জায়গা নেই। এটার কোনো শেষও দেখছেন না তারা।
ফিলিস্তিনের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত শুরুর পর গতকাল রোববার ছিল ভয়াবহ দিন। গতকাল ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় ১৬ নারী, ১০ শিশুসহ ৪২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শিশুসহ একদিনে এত মৃত্যু গত এক সপ্তাহে হয়নি।
হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গাযায় এ পর্যন্ত ১৮৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ৫৫ জন শিশু এবং ৩৩ জন নারী। এছাড়া আহত হয়েছে আরো ১২৩০ জন। ইসরায়েল বলছে, নিহতদের মধ্যে অনেকেই জঙ্গি ছিল।
এদিকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের সংঘাত কমার কোনো লক্ষণ নেই। গাজায় স্থানীয় সময় গতকাল রোববার রাতে ও সোমবারও বেশ কয়েকটি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসও ইসরায়েলের শহরগুলোতে রকেট হামলা চালিয়েছে।
গাজায় ধসে পড়া ভবন ও বাড়িঘরের ধ্বংসস্তুপ থেকে জীবিত মানুষ ও মরদেহের খোঁজে তল্লাশি-উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে গাজা বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী। হামলার ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন হাজার হাজার পরিবার। তারপরও প্রাণে রক্ষা পাচ্ছেন না।
সংঘাত বন্ধের আন্তর্জাতিক আহ্বান উপেক্ষা করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গতকাল বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক এই অভিযান ‘পুরোদমে’ চলবে। যতদিন প্রয়োজন ততদিন তা চলবে। প্রয়োজনে হামলা জোরদারের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
জাতিসংঘের বৈঠক
সম্প্রতি জাতিসংঘের ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা কাউন্সিল বৈঠকে বসলেও আনুষ্ঠানিক কোন বিবৃতিতে সম্মত হতে পারেনি এবং বৈঠকের পর কেউ এ নিয়ে মুখ খোলেনি। ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আসেনি কারণ তারা মনে করছে যে এটি দুই দেশের কূটনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
রোববারের বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, সব পক্ষ যদি অস্ত্র-বিরতি চায় তাহলে তাতে সমর্থনে প্রস্তুত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া সংঘাত নিরসনে তারা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি একটি শরণার্থী শিবিরে শনিবারের হামলায় একই পরিবারের ১০ সদস্য নিহত হওয়া এবং ৫ মাস বয়সী একটি মাত্র শিশুর বেঁচে যাওয়ার ঘটনা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ইসরায়েল সবসময় আমাদেরকে বলে যে আমরা যাতে তাদের জুতোয় পা রেখে দেখি, কিন্তু তারা তো কোন জুতো পরেনি, তারা মিলিটারি বুট পরে রেখেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের স্থায়ী প্রতিনিধি গিলাদ এরদান, হামাসের হাতে নিহত ১০ বছর বয়সী এক আরব-ইসরায়েলি মেয়ে শিশুর ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি জোর দিয়ে দাবি করেন যে, ইসরায়েল সন্ত্রাসীদের অবকাঠামো ভেঙ্গে এবং বেসামরিক প্রাণহানি না করে তারা আসলে বীরোচিত কাজ করছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯২৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ