পুলিশের বিরুদ্ধে হেফাজতে নিপীড়নের অভিযোগ ক্রমশ আরও শক্ত হচ্ছে। হেফাজতে নিপীড়ন বন্ধে হাইকোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ বাহিনী নিয়মিত এ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এবার বাংলাদেশের ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পে আসামি নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ওই ক্যাম্পের আইসি এসআই মো. বদিউর রহমানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ওই ভুক্তভোগী। পুলিশ এই ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য-প্রমাণ নষ্টের চেষ্টা করছে বলেও ইঙ্গিত মিলেছে।
সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সদর উপজেলার দোগাছি-বেড়পাড়া গ্রামের মৃত খেলাফৎ জোয়ারদারের ছেলে মো. আবদুল জোয়ারদার (৪০) নির্যাতন করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই দিন তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের শিকার আবদুল জোয়ারদারকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেছেন।
আবদুল জোয়ারদার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বলেন, পুলিশ ক্যাম্পের কাছে চায়ের দোকান রয়েছে তার। ৯ নভেম্বর ২০২০, সোমবার বিকাল অনুমান সাড়ে ৩টার দিকে ক্যাম্পের এএসআই মো. সেলিম হোসেন তার দোকানে আসেন এবং ক্যাম্পে যেতে বলেন। এ সময় ওই এএসআইকে তিনি জানান যে, ছেলে দোকানে আসার পরে ক্যাম্পে যাব।
তিনি বলেন, কিছু সময় পরে দোকানে ক্যাম্পের আইসি (এসআই) বদিউর রহমান এসে হাজির। ক্যাম্পে যেতে বিলম্বের কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং আবদুল ও তার ভাই শরিফুলকে ধরে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে এক দফায় মারপিট করা হয় তাকে। এক পর্যায়ে ক্যাম্পের হাজতে রাখা হয় তাদের দুইজনকে। আবদুল জোয়ারদার জানান, ২০১৯ সালের দিকে গ্রাম্য একটি মারামারির ঘটনায় প্রতিপক্ষের দায়ের করা মামলার ৫নং আসামি তিনি। ইতোমধ্যে মামলাটির চার্জশিট আদালতে দাখিল করেছে পুলিশ। ওই মামলায় নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিয়ে আসছেন তিনিসহ সাতজন।
তিনি জানান, গত মাসের ২৫ তারিখে মামলার তারিখ ছিল। ওই দিন আদালতে হাজিরা দেয়নি তারা কেও। এতে করে আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে ধরে আনার পরে জানানো হয় তাকে। তিনি অভিযোগ করেন, ক্যাম্পের আইসি হাজতে প্রবেশ করে এবং দ্বিতীয় দফায় কিল ঘুষি, লাথিসহ বেদম ভাবে মারপিট ও নির্যাতন করে আহত করা হয় তাকে। নির্যাতনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।
দোগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইসহাক আলী জোয়ারদার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে গ্রামে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে মামলা দায়ের করে প্রতিপক্ষরা। সেই মামলায় ধার্য তারিখে আদালতে হাজিরা না থাকায় আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পুলিশ আবদুল ও তার ভাই শরিফুলকে গ্রেফতার করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। হাজতে নিয়ে আইসি (এসআই) নিজে আবদুলকে নির্যাতন করেছে।
নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে আইসি (এসআই) মো. বদিউর রহমান বলেন, আবদুলের বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানামুলে আটক করা হয়। ক্যাম্পে আনার কিছু সময় পরে বুকে ব্যথা অনুভব করে সে। এরপর তাকে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মোটরসাইকেলে চড়িয়ে নারিকেল বাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্প থেকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। মঙ্গলবার সুস্থ হওয়ার পরে আদালতে হাজির করা হয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আবদুলকে মারপিট করেননি তিনি।
অন্যদিকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সাধারণ খাতায় মো. আবদুল জোয়ারদারের নাম থাকলেও ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য নেই বলে কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স ফাহমিদা নাজনীন জানান। মেডিসিন ওয়ার্ডে কর্তব্যরত অপর সিনিয়র স্টাফ নার্স মৌসুমির দেয়া তথ্য মতে ৩৬২৮৭/১১৯ নাম্বার টিকিটে ভর্তি করা হয় আবদুলকে। যা কিনা প্রমাণ করে, পুলিশ আহত আসামিকে হাসপাতালে ভর্তির তথ্য গোপন করতে চাইছে।
সূত্র মতে, ঘটনার দিন রাত পৌনে ১০টার দিকে পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা আহত আবদুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তবে এখন পদস্থ কেউ তা স্বীকার করতে চাইছে না। ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার সাইদ জানান, এ বিষয়টি সম্পর্কে এখনো জানি না। খোঁজ নিয়ে জানার পর বিস্তারিত বলতে পারব।
Available for everyone, funded by readers. Every contribution, however big or small, makes a real difference for our future. Support to State Watch a little amount. Thank you.
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ