ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে আল আকসা মসজিদ এলাকায় দখলদার বাহিনীর তাণ্ডব অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে মুসল্লিদের ওপর হামলার পর সোমবার সকালে মসজিদ কম্পাউন্ডে অভিযান চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এ সময় তারা মসজিদ এলাকা ঘেরাও করে রাখে। মুসল্লিদের ওপর রাবার কোটেড বুলেট, টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করে। এতে শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়।
ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডবের খবর সংগ্রহের জন্য আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে উপস্থিত অন্তত ছয়জন সাংবাদিকও এ সময় চোট পান। তবে আহতদের সেবা দিতে ঘটনাস্থলে চিকিৎসাকর্মীদের যেতে দেয়নি ইসরায়েলি বাহিনী।
আলজাজিরা জানায়, আল-আকসা মসজিদের ‘মাগরিবি গেট’ দিয়ে ভেতরে ঢুকে অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিওতে আল-কিবলি মসজিদের ভেতরে ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি ও বিকট শব্দ উৎপন্নকারী স্টান গ্রেনেড ছুঁড়তে দেখা যায়। এছাড়া আল-আকসা মসজিদের ভেতরে ফিলিস্তিনি নারী ইবাদতকারীদের ওপরও স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে দেখা যায় ইসরায়েলি বাহিনীকে।
এদিকে আজ সোমবার ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো অনেক বছর আগে যে মামলা করেছিল সেটা আদালতে শুনানি হওয়ার কথা আছে।
২৭ বছরের একজন ফিলিস্তিনি মাহমুদ আল-মারবুয়া রয়টার্সকে বলেন, ‘তারা আমাদের নামাজ পড়তে দিতে চায় না। সেখানে প্রতিদিনই লড়াই করতে হচ্ছে, প্রতিদিনই সহিংসতা হচ্ছে। প্রতিদিনই সেখানে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।’
কিছুদিন ধরে শেখ জাররাহ এলাকায় উচ্ছেদের মুখে পড়া পরিবারগুলোর সমর্থনে এলাকাটিতে সমবেত হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। সংহতি জানাতে আসা এসব মানুষদের ওপরও হামলে পড়ে পড়ছে দখলদার বাহিনী। তাদের ওপর টিয়ার গ্যাস, রাবার কোটেড বুলেট এবং শক গ্রেনেড ব্যবহার করে ইসরায়েলি সীমান্তরক্ষীরা।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সাম্প্রতিক এই সহিংসতার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দাবি, সবার প্রার্থনা করার অধিকার রক্ষার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে তার দেশ। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস একে ইসরায়েলের ‘পাপীদের হামলা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
সহিংসতার পেছনের কারণ
১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকেই পূর্ব জেরুজালেম দখল করে রেখেছে ইসরায়েল। পুরো শহরকে তারা নিজেদের রাজধানী বলে মনে করলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ দেশ তাতে স্বীকৃতি দেয়নি। ফিলিস্তিনিরা দাবি করে, পূর্ব জেরুজালেম হবে তাদের স্বাধীন দেশের রাজধানী।
ওই এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে, কারণ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের জন্য পূর্ব জেরুজালেমের বাড়িঘর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার সম্ভাবনায় প্রতিদিনই কলহ তৈরি হচ্ছে।
জাতিসংঘ ইসরায়েলের প্রতি আহবান জানিয়েছে যেন যেকোনো ধরনের উচ্ছেদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করা হয় এবং বিক্ষোভকারীদের প্রতি যেন সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখানো হয়।
জোর করে বাস্তুচ্যুত করার যেকোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহবান জানিয়েছে আরব লীগ। এর আগে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই গত ৭ ও ৮ মে আল-আকসা মসজিদে মুসল্লিদের ওপর হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে কয়েক শ মুসল্লি আহত হন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭০৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ