রাশিয়ার কারাবন্দি বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনির স্বাস্থ্যের অবস্থা ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে৷ তাকে বাঁচাতে তাই মুক্তির দাবিতে রাশিয়াজুড়ে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। এসময় আটক করা হয়েছে ১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি বর্তমানে রাশিয়ার কারাগারে বন্দি আছেন। গতকাল বুধবার (২১ এপ্রিল) তার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল ছিল রাশিয়ার বিভিন্ন শহর। এদিন দেশটির বেশ কয়েকটি বড় শহরে রাজপথে নামেন হাজার হাজার মানুষ। এ সময় বিক্ষোভে বাধা দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। আটক করা হয় দেড় হাজারের বেশি আন্দোলনকারীকে।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবর অনুসারে, বুধবার রাতে রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার মানুষ। এসময় তারা নাভালনির মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে বিক্ষোভ করেন। সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে দেশটির রাজধানী মস্কোতে।
বিক্ষোভকারীরা নাভালনিকে কারাবন্দী করার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তারা নাভালনির মুক্তি দাবি করছেন। তার যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছেন।
এক বিক্ষোভকারী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, তিনি নাভালনির জন্য বিক্ষোভে এসেছেন। রাশিয়াকে মুক্ত করার এটাই সুযোগ। আরেকজন বিক্ষোভকারী বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, এটা তাদের ভবিষ্যতের জন্য লড়াই।
রাশিয়ার আইন অনুসারে বিনাঅনুমতিতে বিক্ষোভ করলে কয়েক দিনের জেল বা জরিমানা হতে পারে।
ওভিডি-ইনফো নামে একটি পর্যবেক্ষক সংগঠনের দাবি, বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় রাশিয়ার ৯৭টি শহর থেকে অন্তত ১ হাজার ৭৮৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
সবচেয়ে বেশি ৮০৫ জন আটক হয়েছেন সেইন্ট পিটার্সবার্গ থেকে। শহরটিতে শক স্টিক (বৈদ্যুতিক শক দেয়া লাঠি) নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয়েছিল নিরাপত্তা বাহিনী।
এদিন আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন নাভালনির প্রেস সচিব কিরা ইয়ারমিশ। অননুমোদিত বিক্ষোভে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানোয় তাকে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এর আগে, নাভালনি কারাগারে পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেয়ে অনশনে যান। এতে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। তার স্বাস্থ্য নিয়ে পরিবার, চিকিৎসক, আইনজীবী ও সহযোগী ছাড়া আন্তর্জাতিক মহলও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তখন তাকে আরেকটি কারা হাসপাতালে হস্তান্তর করা হলেও সমর্থকরা বলছেন, কর্তৃপক্ষ নাভালনির অবস্থা সম্পর্কে তথ্য গোপন করছে।
এদিকে, বিবিসি জানায়, কারা কর্তৃপক্ষের আচরণের সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার জানায়, নাভালনি যদি কারাগারে মারা যান, তবে তার জন্য মস্কোকে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে। একই সঙ্গে দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
ফ্রান্স, জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়নও গতকাল নাভালনির বিষয়ে উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা পরিস্থিতি নিয়ে আজ আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে।
কাউন্সিল ফর ইউরোপের সঙ্গে এক ভিডিও বৈঠকে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জানিয়েছেন যে জার্মানি চেষ্টা করছে যাতে নাভালনি উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা পান৷
রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির স্বাস্থ্যের অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক একদল বিশেষজ্ঞ। এ প্রেক্ষাপটে কারাবন্দী নাভালনিকে চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে রাশিয়া থেকে বাইরের দেশে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
জাতিসংঘের চারজন স্বাধীন বিশেষজ্ঞ গতকাল বুধবার নাভালনির স্বাস্থ্যের অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এই চারজন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ। তারা জাতিসংঘ কর্তৃক নিযুক্ত হলেও সংস্থার পক্ষে এসব কথা বলেননি।
জাতিসংঘের চার বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, নাভালনির জীবন গুরুতর বিপদে রয়েছে।’
এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসার জন্য নাভালনিকে রাশিয়ার বাইরে নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। নাভালনিকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দিতে রাশিয়ার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
একই সঙ্গে জাতিসংঘের চার বিশেষজ্ঞ বলেন, কারাবন্দী অবস্থায় নাভালনির জীবন ও স্বাস্থ্যগত যেকোনো অবস্থার জন্য রুশ সরকার দায়ী থাকবে।
এমন এক সময় জাতিসংঘের চার বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে নাভালনি ইস্যুতে মন্তব্য এল, যখন তার সমর্থকেরা রাশিয়াজুড়ে বিক্ষোভ করছেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে জার্মানি থেকে দেশে ফেরামাত্র বিমানের গতিপথ ঘুরিয়ে অনেক নাটকীয়তার মাধ্যমে নাভালনিকে আটক করে রাশিয়ার সরকার। বিষপ্রয়োগে হত্যাচেষ্টার শিকার হয়ে জার্মানিতে জরুরি চিকিৎসা নিতে যান তিনি।
২০২০ সালের অগাস্টে একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে সার্বিয়া থেকে মস্কো ফেরার সময় এককাপ চা পানের পরই অসুস্থ হয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন ৪৪ বছর বয়সী নাভালনি। বিমানবন্দর থেকে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
অবস্থার পরিবর্তন না হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জার্মানি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই পরীক্ষায় জানা যায়, সোভিয়েত আমলে তৈরি বিষাক্ত নার্ভ এজেন্ট নোভিচক দিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।
তিনি এই বিষপ্রয়োগের ঘটনায় প্রেসিডেন্ট পুতিনকে নির্দেশদাতা হিসেবে সন্দেহ করেন। রুশ সরকার অবশ্য এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বানে ক্রেমলিন কর্ণপাত করেনি।
ক্রেমলিনের হুমকি উপেক্ষা করে গত ১৭ জানুয়ারি দেশে ফেরেন নাভালনি। বিমানবন্দরেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭১৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ