গতকাল বুধবার রাতে পাকিস্তানে বেলুচিস্তানের রাজধানী শহর কোয়েটায় সেরেনা হোটেলে ভয়াবহ বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামি সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান।
হামলায় এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত চারজন নিহত হন এবং আহত ১২ জন।
স্থানীয় সময় বুধবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে ওই বিস্ফোরণের পর পরই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দমকল, উদ্ধারকারী এবং নিরাপত্তা বাহিনী।
বেলুচিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মির জিয়াউল্লাহ বলেছেন, চীনের রাষ্ট্রদূতকে হত্যার জন্য এ হামলা চালানো হয়েছে।
স্থানীয় একটি হাসপাতালের কর্মকর্তা ওয়াসিম বেগ চারজনের মৃতদেহ পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সূত্র মতে পাকিস্তানের তালেবান গোষ্ঠী আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী প্রদেশটিতে এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানায়নি তারা।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন স্থানীয় পুলিশের ডিআইজি আজহার ইকরামের বরাত দিয়ে জানায়, সেরেনা হোটেলে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, কোনো একটি গাড়িতে শক্তিশালী ওই বোমা রাখা ছিল।
তিনি বলেন, এই হামলায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে এক পুলিশ কর্মকর্তাও আছেন।
ঘটনার পরপর ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও উদ্ধারকারী সংস্থার কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এই এলাকায় কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
সাম্প্রতিক মাসগুলোয় আফগান সীমান্তবর্তী উপত্যকা অঞ্চলগুলো তালেবানসহ অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ও প্রসঙ্গে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ বলেছেন, বিস্ফোরক বোঝাই একটি গাড়ি সে হোটেলে বিস্ফোরণ ঘটায়। এই ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী কাজ’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।
উল্লেখ্য, কোয়েটার সেরেনা হোটেল পাকিস্তানে বেশ জনপ্রিয়। সরকারি কর্মকর্তাসহ বিশিষ্ট লোকদের আবাসনের ব্যবস্থা করে থাকে এই হোটেল।
হামলার দায় স্বীকার তালেবানের
এ হামলার দায় স্বীকার করে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তালেবানের এক মুখপাত্র জানায়, তারাই এ হামলা চালিয়েছেন।
তিনি বলেন, এটি ছিল আত্মঘাতী হামলা। হোটেলের ভেতরে গাড়িভর্তি বিস্ফোরক নিয়ে ঢুকে পড়ে আমাদের আত্মঘাতী হামলাকারী।
এ ঘটনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে বেলুচিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মির জিয়াউল্লাহ বলেন, ওই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ বেড়ে গেছে। এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রমে আমাদের নিজেদের লোকজনই জড়িত।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, এ হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিলেন পাকিস্তানে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত। তবে তিনি বিস্ফোরণের সময় ওই হোটেলে ছিলেন না।
মন্ত্রী বলেন, আমি একটু আগেই চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি সুস্থ ও ভালো আছেন। এ ঘটনার তদন্ত চলছে।
বেলুচিস্তান সরকারের মুখপাত্র লিয়াকত সায়ানি এক টুইটবার্তায় বলেন, এ হামলার ঘটনায় সম্ভাব্য সব বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত করা হবে। এর সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
কেন এই হামলা?
পাকিস্তানের অন্যতম দরিদ্র এলাকা বেলুচিস্তান। এখানে বেশ কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠী, বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং ইসলামী চরমপন্থিরা সক্রিয় রয়েছে।
বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বেলুচিস্তানকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করতে চায় এবং সে অঞ্চলে চীনের তৈরি অবকাঠামোর বিরোধিতা করছে।
বিচ্ছিন্নতাবাদীরা মনে করে, পাকিস্তানের সরকার এবং চীন একত্রিত হয়ে বেলুচিস্তানের গ্যাস এবং খনিজ সম্পদ স্থানীয় জনগণের কাজে না লাগিয়ে সেগুলোর অপব্যবহার করছে।
সম্প্রতি পাকিস্তানি তালেবান এবং অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলো আফগানিস্তান সীমান্তে উপজাতীয় এলাকায় তাদের হামলা বৃদ্ধি করেছে।
এ অঞ্চলে এর আগেও চীনের নাগরিক এবং বিভিন্ন প্রকল্পে তালেবান হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিলাসবহুল এই হোটেলের কাছেই রয়েছে ইরানের কনস্যুলেট এবং প্রাদেশিক পার্লামেন্ট ভবন।
গত বছর জুনে, বালুচিস্তানে বিদ্রোহীরা পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জকে টার্গেট করেছিল, যা আংশিকভাবে চীনা সংস্থাগুলোর মালিকানাধীন। সমস্ত আক্রমণ বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি করেছে বলে স্বীকার করেছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১২৩৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ