হেফাজতে ইসলামের কর্মকাণ্ড বিষয়ে শনিবার ৫১ জন আলেমের পর দেশের আরও ৬২ জন আলেম গতকাল রোববার(১৯ এপ্রিল) বিবৃতি দিয়েছেন। মুফতি মাওলানা ড. কাফিল উদ্দীন সরকার সালেহীসহ ৬২ জনের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে হেফাজতের বর্তমান রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিদুষ্ট নেতৃত্ব বর্জনের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সেই সঙ্গে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা।
পাল্টা বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধীতার নামে হেফাজতে ইসলাম ২৫-২৮ মার্চ পর্যন্ত দেশব্যাপী ধ্বংসাত্মক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছিল। ইসলামকে তারা নিজেদের এবং রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব কওমি মাদরাসার কোমলমতি শিক্ষার্থী ও সাধারণ শিক্ষকদের মাঝে ভুল প্ররোচনার মাধ্যমে তাদের ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভাঙচুর, সরকারি অফিস-আদালত, ভূমি অফিস, পুলিশ স্টেশন, বিদ্যুত্ অফিস, শিশুদের বিদ্যালয়, সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত যানবাহনে ও ঘর-বাড়িতে আগুন দিয়েছিল- যে আগুনের তাণ্ডব থেকে আমাদের পবিত্র কোরআন শরীফও রক্ষা পায়নি। এরা মূলত ইসলামের শত্রু।
ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে, ইসলামকে ব্যবহার আসলে তারা ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ফায়দা লুটার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমাদের পবিত্র ধর্ম ইসলাম কখনোই এ ধরনের জঙ্গি কর্মকাণ্ড, ধর্মের নামে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ সমর্থন করে না ও অনুমোদন দেয় না। বরং এ ধরনের কর্মকাণ্ড প্রচণ্ডভাবে আমাদের ধর্মবিরোধী। প্রকৃতপক্ষে হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব হচ্ছে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী, ভণ্ড ও ধর্মীয় লেবাসধারী। এদের হাতে আমাদের শান্তির ধর্ম ইসলাম নিরাপদ নয়।
বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলামের শীর্ষস্থানীয় নেতা মামুনুল হক সম্পর্কে বলা হয়, তিনি বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিলে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় সবসময় নীতি-নৈতিকতার বক্তব্য দিতেন। কিন্তু সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে পরস্ত্রীর সঙ্গে রিসোর্টে সময় কাটাতে গেলে স্থানীয় জনরোষের মুখে পড়েন। জানা যায় তিনি তার প্রকৃত স্ত্রীর নাম দিয়ে এবং নিজের পরিচয় একজন প্রফেসর উল্লেখ করে রুম বুকিং করে ওই নারীর সঙ্গে সেখানে যান। তিনি উত্তেজিত জনগণের কাছে এ নারীকে নিজের স্ত্রী দাবি করলেও পরবর্তীতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া তার প্রকৃত স্ত্রীর সাথে ফোনালাপে এ নারীকে অন্য ব্যক্তির স্ত্রী দাবি করেন। হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব এ ধরনের ভণ্ড, নারীলোভী, দুঃশ্চরিত্র ও নষ্ট ব্যক্তির অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পক্ষ নেন। যা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও নিন্দনীয় এবং ইসলাম বিরোধী।
সুতরাং দেশের জনগণের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে হেফাজতের এ ভণ্ড, মিথ্যাবাদী, ধর্মীয় লেবাসধারী নষ্ট নেতৃত্বের ব্যাপারে সচেতন থাকার জন্য। পাশাপাশি কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাবো এসকল মতলববাজ, ভণ্ড, ও রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিদুষ্ট আলেমদেরকে বর্জনের জন্য, যাতে তারা আপনাদের ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা করতে না পারে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী ৬২ জন আলেমের মধ্যে রয়েছেন- ড. মুফতি কাফিল উদ্দিন সরকার সালেহী, মাওলানা হোসাইন মুরতাজা, মাওলানা আজমির বিন কাসিমী, মালানা সাইফুল ইসলাম, মাওলানা আবু তালেব আল ফারাবী, মাওলানা রফিকুল ইসলাম, মাওলানা মোরতজা আমান মাওলানা আমিন হোসেন বিলালী প্রমুখ।
এর আগে শনিবার (১৭ এপ্রিল) দেশের শীর্ষস্থানীয় ৫১ জন আলেম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলামের বর্তমান নেতৃত্বকে “ফেতনা সৃষ্টিকারী” ও “ধর্ম ব্যবসায়ী” আখ্যায়িত করে এ আহবান জানান তারা।
বিবৃতিতে তারা বলেন, “হেফাজতের এ নেতৃত্ব কিংবা যারা এ ভণ্ড নেতৃত্ব অনুসরণ করছে, দেশের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, তারা শুধুমাত্র ইসলামের শত্রু নয়, তারা দেশ ও দশের শত্রু। যখন তাদের সকল ভণ্ডামি দেশবাসীর কাছে উন্মোচিত হয়েছে তখন তারা এই পবিত্র রমজান মাসে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে দেশবাসীকে ইসলামের দোহাই দিয়ে তাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে নিজেদের অপকর্ম আড়াল করার জন্য মিথ্যা বিবৃতি আশ্রয় নিয়েছে। তাই আমরা আলেম সমাজ এ সকল ভন্ড ও ফেতনা সৃষ্টিকারী ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দেশের প্রতিটি মুসলমান ভাই-বোনদের সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।”
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১২১৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ