নারায়ণগঞ্জে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া প্রতিদিন গড়ে ৩ জন ব্যক্তিদের দাফন সৎকার করছেন নারায়ণগঞ্জের আলোচিত কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের গঠিত টিম খোরশেদের সদস্যরা। বুধবার (১৪ এপ্রিল) প্রথম রমজানের সারাদিনে মোট ৪টি করোনায় মারা যাওয়া মরদেহ দাফন করে টিম খোরশেদের মেম্বাররা। এক পর্যায়ে কাজের ফাঁকে রোজা রেখে ক্লান্ত দেহে কবরস্থানেই বসে পড়েন তারা। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবারো দাফন কাজ শুরু করেন।
জানা যায়, চলতি সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ৩টি করে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির মরদেহ দাফন করেছেন টিম খোরশেদের সদস্যরা। এ কাজ করতে গিয়ে টিমের ৪ সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে ও খোরশেদের বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।
বাংলাদেশে গত এক মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় দেড় হাজার মানুষ মারা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ফ্রেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ থেকে মার্চে মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৭১ জন মানুষ মারা গেছে। অথচ এর পরবর্তী এক মাসে, অর্থাৎ মার্চ মাসের ১৫ তারিখ থেকে এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত এক হাজার চারশ বিয়াল্লিশ জন মানুষ মারা গেছেন। অর্থাৎ পূর্ববর্তী মাসের তুলনায় মৃত্যু বেড়েছে পাঁচ গুন বেশি।
মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে দেশে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। একই সাথে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে বেশ দ্রুত গতিতে। এসব মৃত্যুর বেশিরভাগই হয়েছে ঢাকা এবং তার আশপাশের এলাকায়।
ঢাকার স্বেচ্ছোসেবী সংস্থা আল-মারকাজুল ইসলাম বাংলাদেশে গত এক বছর যাবত কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের দাফনের কাজ করছে। সংস্থাটির একজন কর্মী বলছেন, গত দুই সপ্তাহ যাবত এতো বেশি মৃতদেহ দাফন করতে হচ্ছে যে পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে।
আল-মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশের একজন কর্মী আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, গত দুই সপ্তাহ যাবত মৃতদেহ দাফনের জন্য প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৫০ টি ম্যাসেজ আসছে তাদের কাছে। অথচ নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মৃতদেহ দাফন একেবারেই কমে গিয়েছিল। তখন আমরা ম্যাসেজ পেতাম প্রতিদিন তিনটা বা চারটা। এমন দিনও ছিল যে কোন ম্যাসেজ পাইনি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে, বলেন আনোয়ার হোসেন।
গত বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে নারায়ণগঞ্জে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবার তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। গত বছর এই সময়ে আমরা প্রতিদিন ১-২টি দাফন করেছি। সর্বোচ্চ একদিনে ছয়টি মৃতদেহ দাফন করেছি। তবে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিমাসে দুই থেকে তিনটি মরদেহ দাফন করেছে কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের দল। কিন্তু মার্চ মাসের শুরুতে পরিস্থিতি হঠাৎ করেই বদলে যেতে থাকে।
খোরশেদ জানান, আসলে বিশ্রাম তো আমাদেরও নিতে হয়। হঠাৎ করেই বাড়তি চাপ পড়ে গেছে আর তাই এখন সবাই বিশ্রামের সময় পাচ্ছি না। প্রতিদিন প্রতি ঘণ্টায় অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হচ্ছে। অনেক পরিবারের মানুষরা আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে রেখে তার আর কোনও খবরই নিচ্ছে না। এমন ব্যক্তিদের পাশে আমাদের টিমের মেম্বাররা রয়েছেন এবং তাদের সেবা করছেন।
এছাড়া মরদেহ দাফন/ সৎকার, নিয়মিত প্লাজমা ডোনেশন, আক্রান্তদের টেলি মেডিসিন সেবা প্রদান এবং এমনও পরিবার আছে যাদের সবাই আক্রান্ত তাদের আহ্বানে তাদের বাজার এবং চিকিৎসার ওষুধ আমাদের টিমের সদস্যরা গিয়ে সরবরাহ করে আসছেন। তিনি আরো জানান, লকডাউনে এখনো মানুষ বের হচ্ছেন, আমাদেরকে আরো সচেতন হতে হবে। অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে নয়তো সামনে খারাপ সময় অপেক্ষা করছে।
করোনায় এক দিনে প্রাণ গেল ৯৪ জনের
বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে যে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৯৪ জন মারা গেছেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পর এটা ছিল এ যাবৎকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের মৃত্যু। বুধবার বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড ৯৬ জন মানুষ মারা গিয়েছিলেন। এ নিয়ে করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে মোট মারা গেলেন ১০ হাজার ৮১ জন মানুষ।
এছাড়া, এই ২৪ ঘণ্টা সময়ে নতুন করে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন এমন ৪,১৯২ জন শনাক্ত হয়েছেন। ফলে দেশটিতে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭ হাজার ৩৬২ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫,৯১৫ জন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ