করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে নাস্তানাবুদ বাংলাদেশ। ধুঁকতে থাকা স্বাস্থ্যব্যবস্থা আর দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত প্রশাসন করানো প্রতিরোধে নিজেদের ব্যর্থতা অন্যের কাঁধে চাপাতে ব্যস্ত। এদিকে প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যু আর আক্রান্তের সংখ্যা।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ৩৯৯তম দিবসে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় একদিনে সর্বোচ্চ ৭৭ জনের মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৩ জন পুরুষ ও ২৪ জন নারী। তাদের সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে নয় হাজার ৬৬১ জন।
একই সময়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি ২৪৩টি ল্যাবরেটরিতে ২৫ হাজার ১৮৫টি নমুনা সংগ্রহ ও ২৬ হাজার ৭৭টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৩৪৩ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৯৩৭ জন।
ঘুরে বেড়াচ্ছে করোনা রোগী!
ঝালকাঠি জেলায়ও করোনার সম্প্রতি সংক্রমণ বেড়ে গেছে। প্রতিদিন আক্রান্তদের সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে এবং হোম আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে।
তবে অভিযোগ রয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে থাকা রোগীরা নিয়ম-কানুন না মেনে বাইরে এসে ঘোরাঘুরি করছেন। এমনকি আত্মীয়-স্বজনরাও আইসোলেশনে থাকা রোগীর সঙ্গে এসে দেখা করে যাচ্ছেন।
ফলে জেলায় করোনা পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রসঙ্গত, ঝালকাঠি জেলায় ৩ জন হাসপাতালে ও ১২১ জন হোম আইসোলেশনে আছেন।
সপ্তাহখানেক আগে করোনায় আক্রান্ত হন ঝালকাঠি পুলিশ সুপার অফিসের এক কর্মচারী। শহরের কলেজ খেয়াঘাট এলাকায় নিজ বাড়িতে হোম আইসোলেশনে থাকলেও করোনায় আক্রান্ত হলেও প্রায়শই বাইরে বের হতে দেখা যায় তাকে। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, অনেক আত্মীয়স্বজনও দেখতে আসছে তাকে।
এছাড়া কয়দিন আগে করোনায় আক্রান্ত হন সদর উপজেলা পিসিপাশা ইউনিয়নের এক যুবক। তিনি আছেন জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে। কিন্তু তাকে হাসপাতালেও রাখা যাচ্ছে না। প্রায় সময়ই তিনি ওষুধ কিংবা এটা-সেটা কিনতে বের হচ্ছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, এতগুলো রোগীর আইসোলেশনে থাকার বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের জনবল নেই। গতবার জেলা ও পুলিশ প্রশাসন যে ভূমিকা রেখেছিল এবার তারা এ বিষয়ে কঠোর ভূমিকা পালন করছে না।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন রতন কুমার ঢালী বলেন, আইসোলেশনে যারা আছেন তাদের আটকানোর মতো জনবল আমাদের নেই। আর কেউ ঘোরাফেরা করলো তো আমরা আটকে রাখতে পারি না। আমরা চেষ্টা করবো আইসোলেশনে থাকার রোগীরা বাইরে বের না হয়। রোগীদের নিজেদেরও সচেতন হতে হবে।
জেলা প্রশাসকের তৎপরতা
ঝালকাঠিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন। এরমধ্যে ঝালকাঠির ভিশন ও এলজি শো-রুম খোলা রাখার দায়ে তাদের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
ঝালকাঠির ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিফাত বিন সাদেক জানান, গত সোমবার সকাল থেকে বিধি নিষেধ না মানায় ভিশন শো-রুমকে ৫ হাজার, এলজি শো-রুমকে ৫ হাজার, মেসার্স শফিকুল ইসলামকে ২ হাজার, দেবনাথ বস্ত্রালয়কে ৩ হাজার, পুজা হার্ডওয়্যারকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিফাত আরও জানান, এছাড়া শহরের মাছ বাজার, কাপুড়িয়াপট্টিসহ বিভিন্ন স্থানে মোট ২৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। লকডাউন কার্যকরে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তবে এই তৎপরতাও মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে পারছে না। লকডাউন ঘোষণায় মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মাছ আর সবজির বাজারে। গ্রামে ফিরতে ভীড় করছে বাস আর লঞ্চ টার্মিনালগুলোতে। স্যানিটাইজার দূরের কথা মাস্ক পরতেও এখনও মানুষের অনীহা। আর পড়লে তা কখনও উঠে যাচ্ছে মাথায় তো কখনও নেমে যায় থুতনিতে। কেউ কেউ ভীড়ে পরবে বলে খুলে রেখে দেয় মাস্ক। এইসব অসচেতনতার মধ্যে করোনার সংক্রমণে ভেঙে পড়ার মুখে সকল প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪২০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ