মানবাধিকার সংগঠন ও অধিকারভিত্তিক অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপগুলোর পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী থানায় ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক ছবি পোস্ট করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় মােঃ রাজু (২৭ ) নামে এক অটোচালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ।
গ্রেফতার হওয়া রাজু উপজেলার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বেলসাড়া গ্রামের মোশারফ হোসেন মুসার ছেলে। তিনি নিরক্ষর এবং অটো চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন বলে তার পরিবার জানিয়েছে ।
বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) রাতে বালিয়াডাঙ্গী থানার এসআই রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫/২৯/৩১/৩৫ ধারায় অটোচালক রাজুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। অনদিকে বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বেলসাড়া গ্রামের গোলাম রব্বানী নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে আরও কয়েকজন বিরুদ্ধে একই আইনের ২৫/২৯/৩১ ধারায় পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেন।
তদন্ত ও গ্রেফতারের স্বার্থে মামলার আসামীদের নাম গোপন রাখতে অনুরোধ করেছে থানা পুলিশ। পুলিশ বলছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করেছিলেন অটোচালক রাজু।
বৃহস্পতিবার বিকালে তাকে থানায় আটক করে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে তার বিরুদ্ধে মামলা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫/২৯/৩১/৩৫ ধারায় মামলা দিয়ে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। অপরদিকে জিজ্ঞাবাদের পর আরও কয়েকজন এমন ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আরেকটি মামলা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫/২৯/৩১ ধারায়।
ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বালিয়াডাঙ্গী থানার এসআই মামুনুর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অটোচালকের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বালিয়াডাঙ্গী থানার এসআই আব্দুস সােবহান শুক্রবার দুপুরে জানান, গ্রেফতার করা আসামী রাজুকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। নিরক্ষর ও অটোচালক এমন কাজ নিজেই করেছে, না অন্য কারাে পরামর্শে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি তদন্ত আব্দুস সবুর বলেন, মামলা দুটি পুলিশ অত্যন্ত গুরত্ব সহকারে দেখছে।
এদিকে, বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত দুই বছরে সাংবাদিক, রাজনীতিক, শিল্পী, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, গার্মেন্টসকর্মী থেকে শিক্ষক ছাত্র পর্যন্ত আসামী হয়ে জেল খেটেছেন। এ আইন নিয়ে বিতর্ক এবং উদ্বেগের মূল কারণ হিসেবে বলা হয় বেশকিছু ধারার মাধ্যমে যথেচ্ছা হয়রানির সুযোগ রয়েছে।
এ আইনের ৪৩ ধারায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি, জব্দ এবং আটকের অসীম ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আর আইনে ব্যাক্তি বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তী ক্ষুণ্ন করা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বা উস্কানি, মানহানিকর তথ্য প্রচার ও প্রকাশ এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতির মতো বিষয়গুলোতে বিভিন্ন ধারায় অপরাধ ও শাস্তির বিধান রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ভুল ব্যাখ্যার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা বলেন, সংবিধানে নাগরিকদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার দিয়েছে। যেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে।
“সবার মধ্যে একটা ভীতি যে এইটা বললে কী হবে! এবং আমরাও বলি যে এতকিছু বলো না তোমার বিপদ হবে। এটা স্বাধীন দেশে আমরা কেন করবো? এটা কিন্তু বেশ স্বার্থকভাবে সরকার করে ফেলেছে। সেল্ফ সেন্সরশিপ একটা ভীতি প্রদর্শন, ভীতি মানুষের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া।”
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৫৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ