পাকিস্তানে বাণিজ্যিকভাবে গাঁজা উৎপাদন করা বৈধ। গত বছরের সেপ্টেম্বরে গাঁজা উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। দেশটির জনগণ অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হওয়ার উদ্দেশ্যে গাঁজা চাষ করতে পারবেন। এর মাধ্যমে আগামী তিন বছরে ১০০ কোটি ডলার আয়ের সম্ভাবনা দেখছে ইমরান খানের সরকার৷
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সভাপতিত্বে প্রথমবারের মতো শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদনের জন্য গাঁজার লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে।
চিকিৎসা এবং শিল্পক্ষেত্রে গাঁজা ও গাঁজাসংশ্লিষ্ট পণ্যের উৎপাদন করে দেশ কীভাবে লাভবান হতে পারে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তা তুলে ধরেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ফাওয়াদ বলেন, ‘আমরা চাই, গাঁজার এই বাজার আগামী তিন বছরে আমাদের এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবে।’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা প্রথমবারের মতো চিকিৎসা ও শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহারের জন গাঁজার লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি অনুমোদন করেছে। দেশটির জনগণ চিকিৎসার উদ্দেশ্যে গাঁজা ব্যবহার করতে পারবেন। গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্তের পর এতদিন আটক করা গাঁজা পুড়িয়ে না ফেলে ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হবে।
এ দিকে সরকারের এই সিদ্ধান্ত জনগণকে আশাহত করলেও অনেকে একে স্বাগত জানিয়েছেন। এ ধরনের সমস্যার বাস্তবভিত্তিক সমাধানের পথে পাকিস্তানের অগ্রসর হওয়ার প্রশংসা করেন তারা। পাকিস্তান মুক্তমনা পথ অনুসরণের চেষ্টা করছে এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে গাঁজা ব্যবহারের সম্ভাবনা উড়িয়ে না দিয়ে বরং সব ধরনের রোগীকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ দিয়েছে।
গাঁজা অনেকের কাছে মাদক হিসেবে পরিচিত হলেও যুগ যুগ ধরে চিকিৎসাশাস্রে ব্যবহার হচ্ছে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল মার্কেট ইনসাইটের গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বে গাঁজার বৈধ বাজারের আকার ৫৯ হাজার কোটি ডলার ছাড়াবে।
সম্প্রতি গাঁজাকে কঠিন মাদকের তালিকা থেকে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় গাঁজার প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখেই নেয়া হয় এই সিদ্ধান্ত।
গেলো কয়েক বছর ধরে লোকসানের মুখে আছে পাকিস্তানের অর্থনীতি। রপ্তানির ৬৪ ভাগ যেই তুলা থেকে আসে, ২০১৯ সালে তার উৎপাদন ২০ ভাগ কমেছে। তাই সেই জায়গায় গাঁজা চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছে দেশটির সরকার।
দেশটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের একটি অংশ ধরতে পারলে তিন বছরে এই খাত থেকে পাকিস্তানের আয় দাঁড়াবে ১০০ কোটি ডলার। যেখানে গোটা আন্তর্জাতিক বাজারের আকার এখন ২৫ হাজার কোটি ডলার।’
পাকিস্তানে বসবাসরত জার্মান পরিবেশবিদ হেলগা আহমেদ বলেন, ‘গাঁজা এমনকি খারাপ আবহাওয়াতেও সহজে চাষ করা সম্ভব। এর উৎপাদনে কোনো কীটনাশকের প্রয়োজন নেই, যার কারণে এটি পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ৷। এমনকি অল্প জমিতেও এটি যথেষ্ট জন্মে এবং তুলার চাষের চেয়ে কম পানির প্রয়োজন হয়।’
অ্যালকোহলের বিষয়ে রক্ষণশীল হলেও পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্যানাবিস বা গাঁজা উন্মুক্তভাবেই চাষ এবং বেচা-কেনা হয়ে আসছে। বিশেষ করে আফগানিস্তানের কাছে সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠী অনেক আগে থেকেই গাঁজা চাষ করছে। সেসব ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবেও কার্যকর।
কানাডাসহ আরো কয়েকটি দেশ আগেই চিকিৎসা খাতে ব্যবহারের জন্য গাঁজা উৎপাদনের বৈধতা দিয়েছে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো পাকিস্তানও।
অনেক দেশেই গাঁজার বৈধতা পাওয়ার বিষয়টি শুরু হয়েছে গাঁজার ব্যবহার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনোভাব পরিবর্তনের সাথে সাথে।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় চিকিৎসা কাজে গাঁজার ব্যবহারের বিষয়ে মানুষের মনোভাব পরিবর্তন হতে থাকে মূলত, জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগতে থাকা শিশুদের শারীরিক যন্ত্রণার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হওয়ার পর। একই ধরণের ধারা লক্ষ্য করা গেছে যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রেও। যুক্তরাজ্যে ‘চিকিৎসা কাজে’ গাঁজার ব্যবহার বৈধতা পেলেও ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী ‘বিনোদনমূলক ব্যবহার’ অবৈধই থাকবে।
বিশ্লেষকরা বলেন, গাঁজার বিষয়ে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের মানুষ ও সরকারের মনোভাব পরিবর্তনের ধারা বিশ্লেষণ করে অনুমান করা যেতে পারে যে গাঁজার ব্যবহারের জনপ্রিয়তা বিবেচনা করে অন্যান্য দেশও এর উৎপাদন ও ব্যবসার প্রসারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে।
তারা বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই চিকিৎসার কাজে গাঁজা ব্যবহৃত হচ্ছে, নিকট ভবিষ্যতে আরো অনেক দেশে ব্যবহার শুরু হবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। সম্ভাবনাময় এই খাত থেকে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যেই বিভিন্ন দেশের সরকার গাঁজা চাষকে গুরুত্ব দেয়।
আপনার মতামত জানানঃ