ক্রসফায়ারে হত্যাচেষ্টা ও ইয়াবা দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ এনে ছাগলনাইয়া থানার সাবেক ওসি এম এম মুর্শেদসহ ১১ পুলিশ সদস্যের নামে মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসানের আদালতে মো. গিয়াস উদ্দিন দুলাল নামের এক ব্যক্তি মামলাটি করেন। এতে ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জন পুলিশ সদস্য ও বাকি দুজন পুলিশের সোর্স।
সাবেক ওসি এম এম মুর্শেদ ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন এসআই মো. শহিদুল ইসলাম, এসআই দেলোয়ার হোসেন, এসআই মো. মাহবুব আলম সরকার, এসআই মো. খোরশেদ আলম, এএসআই মো. ফিরোজ আলম, কনস্টেবল সুকান্ত বড়ুয়া, নুরুল আমিন (১), নুরুল আমিন (২), মো. সিরাজুল ইসলাম, মো. মাইনুদ্দিন, পুলিশের সোর্স আবুল খায়ের ছোটন ও আবুল হাশেম প্রকাশ বোমা হাশেম। তাঁদের মধ্যে ওসি মুর্শেদ রাজধানীতে এবং বাকি পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা বিভিন্ন থানায় কর্মরত।
ক্রসফায়ারে হত্যাচেষ্টা ও ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে
মামলার বিবরণে জানা যায়, বাদী পিকআপচালক গিয়াস উদ্দিন দুলাল গত বছরের ১৭ জানুয়ারি দুপুরে ফেনী সদরের কাজীরবাগে মাদক মামলার ভয় দেখিয়ে আবুল হাশেম ও আবুল খায়ের নামের দুই সোর্সসহ পুলিশ সদস্যরা তাঁর কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। এ সময় চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিকেলে তাঁকে কাজীরবাগ থেকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে ছাগলনাইয়ার পাঠাননগর এলাকায় ব্রাদার্স ব্রিকফিল্ডে নিয়ে যান তাঁরা। সেখানে ওসি মুর্শেদ এসে চোখ বেঁধে ফের পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু টাকা দিতে না চাইলে তাঁরা ক্রসফায়ারের হুমকি দেন। খবর পেয়ে স্বজনরা এক লাখ টাকা দেওয়ার কথা বললেও ওসি তাতে রাজি হননি। পরে তাঁকে ফের চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসে করে একই উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের রাস্তার মাথায় নিয়ে ওসির নির্দেশে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়।
একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে ওসির সঙ্গে থাকা সুকান্ত বড়ুয়া নামের এক পুলিশ সদস্যের শটগান নিয়ে দুলালের ডান পায়ে তিন রাউন্ড গুলি করেন। এরপর তাঁরা এলোপাতাড়ি লাথি মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন। পরে অজ্ঞান হয়ে পড়লে মৃত্যু হয়েছে ভেবে তাঁরা দুলালকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে অস্ত্রোপচার করে তাঁর ডান পা কেটে ফেলা হয়। সাত দিন পর পুলিশ হেফাজতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফের তাঁর বিরুদ্ধে এক হাজার ৪০০ পিস ইয়াবাসহ মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালতের বাইরে গতকাল সাংবাদিকদের কাছে গিয়াস উদ্দিন দুলাল বলেন, পঙ্গু হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি। তাই মামলা করতে দেরি হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন তিনি। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে জানান, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আপনার মতামত জানানঃ