শাহদীন মালিক : বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়টি প্রত্যাশিত। তবে রায়ের কিছু অংশ নিঃসন্দেহে অপ্রত্যাশিত। গত বছরের ২৬ জুন আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর গণমাধ্যমের বিবরণ অনুযায়ী রিফাতের সহধর্মিণী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে ঘটনার ‘ভিকটিম’ বলে মনে হয়েছিল। চোখের সামনে স্বামীর নৃশংস হত্যাকাণ্ড মিন্নির প্রতি আমাদের প্রত্যাশিত সহানুভূতির উদ্রেক করে। পরবর্তী সময়ে মিন্নিকে যখন আসামি করা হয় তখন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ জেগেছিল। এটা এখন অনস্বীকার্য যে, বিচারিক আদালতের রায়ে এ সন্দেহের অবসান ঘটেছে।
আদালত নিশ্চয়ই সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এ হত্যাকাণ্ডে মিন্নির ভূমিকা ও সম্পৃক্ততা সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন। তবে মিন্নির ব্যাপারে রায়টি অপ্রত্যাশিত। কারণ, আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, প্রকাশ্যে স্বামীর হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে
স্ত্রীর কোনো সম্পৃক্ততা থাকতে পারে না। অবশ্য মামলার অপর ৫ আসামির দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং তাদের চরম শাস্তির আদেশ ছিল অনেকটাই প্রত্যাশিত। একইভাবে মামলার অপর চার আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সত্ত্বেও রায়ে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া নিঃসন্দেহে অপ্রত্যাশিত।
সার্বিকভাবে হত্যাকাণ্ডের পনেরো মাসের মাথায় বিচারিক আদালতে রায় পাওয়াটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তদন্ত দ্রুত শেষ হয়েছিল, মামলার ৭৪ জন সাক্ষীকে যথাসময়ে আদালতে হাজির করার জন্য তাদের ভূমিকাও নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কারণ, এই করোনা পরিস্থিতিতে অধস্তন আদালত দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। তার মধ্যেও বিচারক দ্রুত বিচার সম্পন্ন করেছেন। অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা থাকলে এবং যথাসময়ে সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হলে বিচার যে দ্রুত সষ্পন্ন করা যায়, এটা তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তবে এই বিচার প্রক্রিয়ায় দুই-একটি দিক আমাদের ভীষণ বিচলিত করেছে, সেটা হলো রিফাত হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের কথিত ক্রসফায়ারে মৃত্যু। বিচারবহির্ভূত এ হত্যাকাণ্ডটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুরো ভূমিকাকে ম্লান করেছে। নয়ন বন্ডের মৃত্যুর ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। দ্বিতীয়ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া সত্ত্বেও মামলার চারজন আসামির খালাস পাওয়াটাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকাকে আরও খাটো করেছে। কেননা, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে বা ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের যে অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে ওঠে, এ ঘটনায় তারই যথার্থতা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। রিমান্ডের ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের যেসব নির্দেশনা রয়েছে, তা মেনে চললে বিচাকার্য আরও সুষ্ঠু হতে পারত। তাই অধস্তন আদালত যে কোনো মামলায় আসামিদের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করা এবং রিমান্ড শেষে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির যথার্থতা নিয়ে সতর্ক থাকলে ন্যায়বিচার করা আরও নিশ্চিত সম্ভব হবে।
আপনার মতামত জানানঃ