কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সাথে সাথেই ফের লকডাউনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবার লকডাউন হলে সাধারণ মানুষের রুটিরুজি, শিল্প, ব্যবসা ও সামগ্রিক অর্থনীতির কী হাল হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এই দোলাচলের মধ্যেই শনিবার (২ এপ্রিল) ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষস্তর থেকে ইঙ্গিত মিলল, এখনই দেশ জুড়ে কোনো লকডাউনের পরিকল্পনা মোদি সরকারের নেই। বরং লকডাউনের বদলে গত বছরের তুলনায় উন্নত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ও কোভিডের টিকা দিয়েই সংক্রমণের মোকাবেলা করা যাবে বলে কেন্দ্রীয় সরকার মনে করছে।
সরকারি সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রোববার (৩ এপ্রিল) কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করতে পারেন। যে ১১টি রাজ্যের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, ক্যাবিনেট সচিব আজ ওই রাজ্যগুলোর মুখ্যসচিবদের সাথে বৈঠক করেছেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, অর্থনীতিতে ফের ধাক্কা এড়াতেই দেশ জুড়ে লকডাউনের কথা ভাবা হচ্ছে না।
ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিষয়ক সচিব তরুণ বজাজ বলেন, ‘ফের কোভিড সংক্রমণ সকলের কাছেই দুশ্চিন্তার। তবে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো এখন আগের তুলনায় অনেক ভাল। কোভিডের টিকাও এসে গিয়েছে। তাই আমার মনে হয়, সরকার এবার লকডাউন না করেই ভাইরাসের মোকাবিলা করবে।’
শুক্রবার (২ এপ্রিল) রাতে টেলিভিশনে এক ভাষণে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধাভ ঠাকরে জনগণকে সতর্ক করে বলেন, যদি লোকজন এখনই তাদের চলাচল সীমিত না করেন তবে সংক্রমণের বিস্তার রোধে তিনি রাজ্যে পূর্ণ লকডাউন জারি করবেন।
বলেন, ‘‘যদি আগামী কয়েকদিনে পরিস্থিতি একই রকম থাকে তবে আমি পূর্ণ লকডাউন জারি করবো। আমার এ বক্তব্য আপনাদের জন্য সতর্কবার্তা।” জনগণ মাস্ক পরছেন না বা অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকছেন না অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘রাজ্যের অবস্থা খুবই উদ্বেগজনক। যদি এটা চলতে থাকে, তবে আগামী ১৫-২০ দিন পর আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এ চাপ আর সামলাতে পারবে না।”
এদিকে, ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৮৯ হাজার ১২৯ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। গত সাড়ে ছয় মাসের মধ্যে এটিই একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। এর আগে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর শনাক্ত হয়েছিল ৯২ হাজার ৬০৫ জন।
এখন পর্যন্ত দেশটিতে এক কোটি ২৩ লাখ ৯২ হাজার ২৬০ জন শনাক্ত হয়েছেন। সংক্রমণের দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে ভারতের অবস্থান বর্তমানে তৃতীয়তে। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭১৪ জন। গত সাড়ে পাঁচ মাসের মধ্যে এটিই একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর আগে গত বছরের ২১ অক্টোবর ৭১৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। করোনায় এ পর্যন্ত ভারতে মারা গেছেন এক লাখ ৬৪ হাজার ১১০ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ৪৪ হাজার ২০২ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন এক কোটি ১৫ লাখ ৬৯ হাজার ২৪১ জন। গতকাল শনিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। এরপর রয়েছে কেরালা, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিল নাড়ু, দিল্লি ও উত্তর প্রদেশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মহারাষ্ট্রে শনাক্ত হয়েছেন ৪৭ হাজার ৮২৭ জন। ভারতে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এটিই মহারাষ্ট্রে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। ভারতে এখন পর্যন্ত প্রায় সাত কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে বলেও এনডিটিভি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৬০৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আর এখন পর্যন্ত পরীক্ষা করা হয়েছে ২৪ কোটি ৬৯ লাখ ৫৯ হাজার ১৯২টি নমুনা।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ভারতে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির করোনাভাইরাস রিসোর্স সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, সংক্রমণের দিক থেকে বর্তমানে বিশ্বে ভারতের অবস্থান তিন নম্বরে। ভারতের আগে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল।
জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ কোটি এক লাখ ৪৬ হাজার ৫১ জন এবং মারা গেছেন ২৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৬৬ জন। এ ছাড়া, সুস্থ হয়েছেন সাত কোটি ৩৭ লাখ ২১ হাজার ২১৫ জন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৫০০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ