অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা মানুষের শরীরে কোভিড–১৯ প্রতিরোধে ৮০ শতাংশ কার্যকর বলে নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করা করোনা ভাইরাসের টিকা যুক্তরাষ্ট্রে এডভান্সড ট্রায়ালে শতকরা ৮০ ভাগ কার্যকর বলে তথ্য মিলেছে। এ কথা জানিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এদিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকায় শূকরের কোনো উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে কিনা বিতর্ক উড়িয়ে দিয়ে এতে শূকরের কোনো উপাদান ব্যবহার করা হয়নি বলে জানিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ৮০% কার্যকর
অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে বড় বিতর্ক শুরু হয় চলতি মাসের প্রথম দিকে। এ টিকা গ্রহণের পর রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকির ভয়ে বেশকিছু দেশ ওই টিকাদান স্থগিত রাখে। তবে টিকা নেওয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে গত সপ্তাহে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। টিকাটি নিরাপদ বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউরোপের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।
এবার যুক্তরাষ্ট্রে মানবদেহে টিকার পরীক্ষার পর নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটি কভিড প্রতিরোধে ৮০ শতাংশ কার্যকর। আর গুরুতর অসুস্থতা বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি ঠেকাতে এটি শতভাগ কার্যকর। টিকাটি নিরাপদ এবং এটি প্রয়োগে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রে মানবদেহে টিকার তৃতীয় পর্যায়ে (চূড়ান্ত পর্যায়ে) পরীক্ষা শেষে আজ সোমবার(২২ মার্চ) এ তথ্য জানানো হলো। খবর এএফপি
এক বিবৃতিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, লক্ষণযুক্ত করোনা ভাইরাসকে প্রতিরোধে এই টিকা শতকরা ৮০ ভাগ কার্যকর দেখা গেছে। ভয়াবহভাবে আক্রান্ত হওয়া এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বন্ধ করতে এই টিকা শতকরা ১০০ ভাগ কার্যকর।
অনুসন্ধানকারীরা বলেছেন, এই টিকা সব বয়সী মানুষের ক্ষেত্রে কার্যকর। তবে এর আগে অন্য দেশে গবেষণার সময় এমন ফল পাওয়া যায়নি।
এই টিকার নেপথ্যে থাকা অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর সারা গিলবার্ট বলেছেন, এখন যুক্তরাষ্ট্রে এই টিকার জরুরি ব্যবহারে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) অনুমোদন পেতে হয়তো কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। এর আগে এফডিএর উপদেষ্টা কমিটি প্রকাশ্যে এসব তথ্যপ্রমাণ নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হবে। তারপর তারা সিদ্ধান্ত নেবে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথভাবে টিকাটি উদ্ভাবন করে যুক্তরাজ্য-সুইডেনভিত্তিক ওষুধ প্রস্তুকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা মানবদেহে পরীক্ষা শুরু হলেও যুক্তরাষ্ট্রে এখনো এ টিকার অনুমোদন মেলেনি। দেশটিতে এ টিকার মানবদেহে পরীক্ষার ইতিবাচক ফল টিকাটি অনুমোদনের পথ সুগম করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের টিকার তৃতীয় পর্যায়ের মানবদেহে পরীক্ষায় ৩২ হাজার ৪৪৯ জন অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে দুই–তৃতীয়াংশের টিকা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশের বয়স ৬৫ বা তার বেশি এবং প্রায় ৬০ শতাংশের স্বাস্থ্যগত অবস্থা কোভিড–১৯–এর জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। তারা ডায়াবেটিস, অত্যধিক স্থূলতা, হৃদ্জনিত রোগে আক্রান্ত। টিকাটি সব বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের উপসর্গ মোকাবিলায় ৮০ শতাংশ কার্যকর। আর গুরুতর অসুস্থ ও হাসপাতালে হওয়া রোগীদের জন্য টিকাটি কার্যকর ১০০ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব রোচেস্টারের সঙ্গে যৌথভাবে ওই পরীক্ষা চালায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব রোচেস্টারের মেডিসিনের অধ্যাপক ও টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষার উপপ্রধান অ্যান ফ্যালসি বলেছেন, আগের পরীক্ষাগুলো পাওয়া ফলাফলকেই সমর্থন করছে এ পরীক্ষা। ৬৫ ঊর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার কার্যকারিতা দারুণ ফল পাওয়া গেছে, যা খুবই উৎসাহব্যাঞ্জক। ফলে অতি প্রয়োজনীয় টিকা হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাকে স্বীকৃতি দিচ্ছে এই পরীক্ষা। একই সঙ্গে বয়স্ক লোকদের আশ্বস্ত করছে যে ভাইরাস থেকে সব প্রাপ্তবয়স্ককে সুরক্ষা দিতে পারে টিকাটি।
বিবৃতিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা আরও বলেছে, মানবদেহে টিকার পরীক্ষার তথ্য পর্যবেক্ষণের নিরপেক্ষ বোর্ড এক ডোজ করে টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের (২১ হাজার ৫৮৩ জন) শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকির কোনো তথ্য খুঁজে পায়নি।
টিকায় শূকরের উপাদান নেই
অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত টিকায় শূকরের কোনো উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, তা নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে ইন্দোনেশিয়ায়। মুসলিম অধ্যুষিত দেশটির জনগোষ্ঠীর মধ্যে কয়েকদিন ধরে এ নিয়ে বিভ্রান্তি বাড়তে থাকে। এ পরিস্থিতিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা গত রোববার(২১ মার্চ) জানায়, তাদের টিকায় শূকরের কোনো উপাদান ব্যবহার করা হয়নি।
ইন্দোনেশিয়ার ধর্মীয় সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ ইন্দোনেশীয় ওলামা কাউন্সিল (এমইউআই) গত শুক্রবার(১৯ মার্চ) তাদের ওয়েবসাইটে দাবি করে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা হারাম। কারণ টিকাটির উৎপাদন প্রক্রিয়ায় শূকরের অগ্ন্যাশয়ের ট্রিপসিন ব্যবহার করা হয়েছে। অবশ্য হারাম ঘোষণা করলেও করোনাভাইরাস মহামারির জরুরি পরিস্থিতিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার ধর্মীয় পরিষদ। খবর রয়টার্সের।
এই পরিপ্রেক্ষিতে রোববার এক বিবৃতিতে ইন্দোনেশিয়ায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার মুখপাত্র রিজম্যান আবু দায়েরি বলেন, উৎপাদনের সব প্রক্রিয়ায় এই ভাইরাস ভেক্টর টিকায় শূকর বা অন্য কোনো প্রাণীর উপাদান ব্যবহার হয়নি। তা ছাড়া পুরো প্রক্রিয়া এমন কোনো প্রাণীর সংস্পর্শেও আসেনি।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিবৃতির পর এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ইন্দোনেশিয়ার ওলামা পরিষদ এবং দেশটির খাদ্য ও ওষুধ সংস্থা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১৩০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতা করুন।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ