শনিবার দখলকৃত জেরুজালেমে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনের বাইরে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তার পদত্যাগের দাবিতে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এদিনের বিক্ষোভে অংশ নেয় প্রায় ২০ হাজার মানুষ। দুই বছরের মাথায় চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনের মাত্র তিন দিন আগে শনিবার এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হলো। এ সময় ৭১ বছরের নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে আওয়াজ তোলে তারা। তাদের অনেকের হাতেই ছিল ইসরায়েলের পতাকা।
সূত্র মতে, ঘুষ লেনদেন, প্রতারণা ও দুর্নীতির দায়ে বিচারের মুখে থাকা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে দেশটির সরকারবিরোধীরা।
তার পদত্যাগের দাবিতে তাই বছরখানেক ধরেই রাজপথে সোচ্চার বিরোধীরা। তবে শনিবারের বিক্ষোভ সাম্প্রতিক সময়ের অন্য বিক্ষোভগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
প্রসঙ্গত, আগামী ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনেও নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি সর্বোচ্চ আসনে বিজয়ী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জনমত জরিপগুলোতেও এমন ইঙ্গিত মিলছে।
তবে কোনও দলই সরকার গঠনের মতো পর্যাপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এ জটিলতায় গত দুই বছরে দেশটিতে তিন দফায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৩ মার্চ দুই বছরের মধ্যে চতুর্থ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।
নেতানিয়াহু সমর্থকদের অবশ্য বিশ্বাস, ট্রাম্প প্রশাসনের সহযোগিতায় বিভিন্ন আরব দেশের কাছ থেকে ইসরায়েলের স্বীকৃতি লাভসহ সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের ফলে এবার মানুষ লিকুদ পার্টিকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে।
প্রসঙ্গত, নেতানিয়াহু এক দশেকরও বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সম্প্রতি তার জনপ্রিয়তা অনেকটাই কমেছে। দুর্নীতির অভিযোগ তো আছেই, অর্থনীতি সামলাতে না পারা সহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠছে তার বিরুদ্ধে। দেশে বেকারের সংখ্যা ২০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। সমালোচকদের দাবি, তিনি সাধারণ মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত
ফিলিস্তিনের কাছ থেকে দখলকৃত ভূমিতে ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে কি-না সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।
বুধবার (০৩ মার্চ) আইসিসির চিফ প্রসিকিউটর ফাতু বেনসৌদার উদ্বৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ২০১৪ সালে গাজায় সহিংসতা চলাকালীন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ, হামাস ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে বিশ্বাস করার ‘যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি’ রয়েছে বলে জানান ফাতু বেনসৌদা।
বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি বিবেচনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের তদন্ত শুরুর বিষয়টি আজ নিশ্চিত করছি।
তদন্তটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত, ভয় বা পক্ষপাতহীন ভাবে পরিচালিত হবে। তবে আন্তর্জাতিক আদালতের এই তদন্ত প্রক্রিয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, আমরা এই ‘বিকৃত বিচারের’ বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়ব।
ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের যুদ্ধাপরাধ তদন্ত শুরুতে ‘গভীর উদ্বেগ’ জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ইসরায়েল আইসিসির সদস্য না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের এখতিয়ার নেই আদালতের।
যদিও ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শতায়ে আইসিসির পদক্ষেপকে ‘ন্যায়বিচার এবং মানবতার জয়’ বলে উল্লেখ করেছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫৫০
আপনার মতামত জানানঃ