মৌসুমি রোগ হিসেবে কোভিড ১৯-এর দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জাতিসংঘ বৃহস্পতিবার (১৮মার্চ) এ কথা বলেছে। এক বছরেরও বেশি সময় আগে চীনে করোনার প্রাদুর্ভাবের পর এ পর্যন্ত ভাইরাসটিকে ঘিরে এখনও যথেষ্ট রহস্যের জট রয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী করোনায় এ পর্যন্ত প্রায় ২৭ লাখ লোক মারা গেছে।
করোনা সংক্রমণে আবহাওয়া ও বায়ুমানের প্রভাব নিয়ে বিশেষজ্ঞ দলের গবেষণার প্রথম প্রতিবেদনে মৌসুমি রোগে পরিণত হওয়ার আভাস পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ১৬ সদস্যের একটি টিম পরিচালিত এই গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাল সংক্রমণ সাধারণত মৌসুমি হয়ে থাকে। করোনা যদি বহু বছর ধরে থাকে, তবে এটি মৌসুমি রোগে পরিণত হবে।
করোনা সংক্রমণ রোধে এ দলটি আবহাওয়ার পরিবর্তনে মাস্ক পরা কিংবা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মতো পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারি উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, তাই আবহাওয়া কিংবা পরিবেশগত পরিস্থিতি এ মুহূর্তে করোনা নিয়ন্ত্রণে নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে না। মহামারির প্রথম বছর অনেক দেশে গরম আবহাওয়াতেও এটির সংক্রমণ ঘটেছে। আগামী বছরগুলোতেও যে এমনটি ঘটবে না তার কোনো প্রমাণ নেই।
ল্যাবরেটরির গবেষণায় দেখা গেছে, ভাইরাসটি ঠান্ডা, শুকনো এবং যেখানে আলট্রাভায়োলেট রেডিশেয়ন নিম্ন পর্যায়ে সেখানে বেশি সময় টিকে থাকতে পারে। তবে আবহাওয়া করোনার সংক্রমণকে কতোটুকু প্রভাবিত করে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এদিকে দেশে ১০০ দিনের মধ্যে করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৮টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সংক্রমিত ২ হাজার ১৮৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ সময়ে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত আরও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ২ হাজার ২০২ জন করোনায় সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩৯ জনের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮ হাজার ৬২৪ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ১৭ হাজার ৫২৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২০ হাজার ৯২৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গত ৯৪ দিনের মধ্যে এটি একদিনে পরীক্ষার বিপরীতে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার।
২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের ঘোষণা আসে। দেশে প্রথম করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তির মৃত্যুর ঘোষণা আসে ১৮ মার্চ।
দেশে সংক্রমণ শুরুর দিকে রোগী শনাক্তের হার কম ছিল। গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এরপর থেকে নতুন রোগীর পাশাপাশি শনাক্তের হারও কমতে শুরু করেছিল। মাস দুয়েক সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকার পর গত নভেম্বরের শুরুর দিক থেকে নতুন রোগী ও শনাক্তের হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়। ডিসেম্বর থেকে সংক্রমণ আবার কমতে শুরু করে। তবে গত চার সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সংক্রমণ আবার ঊর্ধ্বমুখী।
করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গত ২৭ জানুয়ারি দেশে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এদিন গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৬১৬
আপনার মতামত জানানঃ