আবারো পুলিশ কর্মকর্তাদের ভুলে ২৭ দিন কারাগারে বিবিএ পড়ুয়া জিএম নাজমুল ইসলাম। ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য বাবা জিএম আনোয়ার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছেন।
সোমবার (১৫মার্চ) জিএম আনোয়ার নথিপত্র দিয়ে গণমাধ্যমকে জানান, অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ার (নর্থ বেঙ্গল রোড) বাসিন্দা জিএম আনোয়ার। তার ছেলে নাজমুল ইসলাম ঢাকা রিসোর্স কলেজের বিবিএ’র শিক্ষার্র্র্থী। ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আত্মপক্ষ সমর্থনের পর আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠান। সেই থেকে তার ছেলে নাজমুল ইসলাম কারাগারে।
জিএম আনোয়ার আরও জানান, তার ছেলের বয়স ২৪ বছর ৫ মাস। চলতি বছরের শুরুর দিকে অভয়নগর থানা পুলিশ তার ছেলের নামে ওয়ারেন্ট রয়েছে জানিয়ে তার বাড়িতে হাজির হলে একপর্যায়ে তিনি জানতে পারেন, তার ছেলের নামে বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে।
দ্রুত জামিন না করালে আদালতে তার বড় ধরনের সাজা হবে। বিষয়টি জানার পর ছেলেকে নিয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করলে আদালত তার ছেলেকে জেলহাজতে পাঠান। একাধিকবার তার জামিনের আবেদন করা হলেও জামিন মেলেনি। ছেলেটির নামে মামলা রুজুর বিষয়ে জানার জন্য মামলার নথিপত্র দেখে মামলার মূল আসামির বাড়ি বরিশালে হাজির হওয়ার পর বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বরিশাল র্যাব-৮-এর ডিএডি (পুলিশ পরিদর্শক) মো. জহিরুল ওসি বরাবর ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মাদক আইনে একটি এজাহার দাখিল করেন। ওই অভিযোগে ৯নং আসামি হিসাবে দেখানো হয়েছে অণুকে। পরে র্যাব-৮ বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল ওই মামলায় চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে দেখা যায়, ৯নং আসামি হিসাবে জিএম নাজমুল ইসলাম ওরফে অণুর নাম।
মামলার নথিপত্র দেখার পর নাজমুলের বাবা এই মামলার মূল আসামি বরিশাল জেলার গৌরনদী থানার কটকস্থল গ্রামের মজিবুর রহমান ওরফে ইঙ্গল মাঝির ছেলে মো. হিরা মাঝির বাড়িতে হাজির হন। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন আসল রহস্য। পুলিশ কর্মকর্তারা অজ্ঞাত কারণে প্রকৃত আসামিকে আড়াল করে তার ছেলের নামে চার্জশিট দাখিল করেছেন।
এজাহার দাখিলকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম মোবাইল ফোনে জানান, আদালত বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। আসামির নাম ভুল হলে কারেকশন করতে হবে।
এদিকে কয়েকদিন আগে নারায়ণগঞ্জে নামের বিভ্রান্তিতে জামাল হোসেন নামের আসামির বদলে কামাল হোসেনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় লেখা জামাল হোসেন। এতে ওভাররাইটিং করে কামাল হোসেন লেখা হয়। এরপর নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশের একটি টিম সৈয়দপুর পশ্চিম এলাকার মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে ও সৈয়দপুর বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কামাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। ৩ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করে ভুক্তভোগী। তিনি বলেন, গাঁজা উদ্ধারের যে ঘটনায় আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে ঘটনার সময়ে আমি দক্ষিণ কোরিয়া ছিলাম।
এতো গেলো চলতি মাসে ঘটা। এর বাইরেও যে চলতি মাসে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, তাও নিশ্চিত করে বলা যায় না। প্রায় নিয়মিতই অপরাধ না করেও পুলিশ কিংবা কর্তৃপক্ষের ভুলে নিরীহ কেউ সাজাভোগ করে যাচ্ছেন। জাহালম, আরমান বিহারী এমন উদাহরণ আরও রয়েছে। এদেশে এই সংখ্যাটা নেহাত কম নয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঢাকা এবং এর বাইরে যত কারাগার আছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে এমন অসংখ্য নাজমুল ইসলাম, কামাল, আরমান জাহালমের সন্ধান পাওয়া যাবে যারা পুলিশের ভুলে, গাফিলতিতে অথবা অর্থের বিনিময়ে বিনাদোষে শাস্তি ভোগ করছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০১০
আপনার মতামত জানানঃ