বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকার ডোজ প্রয়োগে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার সত্যতা সম্পর্কে কোনো প্রমাণ নেই। কোনো দেশের এ টিকা প্রয়োগ বন্ধ রাখা উচিত নয়।
এদিকে অক্সফোর্ডে টিকার ডোজ প্রয়োগ পরবর্তী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গভীরভাবে পর্যালোচনা করবে ভারত। স্ট্রাজেনেকার এক কর্মকর্তা শনিবার (১৩মার্চ) এএফপিকে এ তথ্য জানিয়েছেন। ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ডোজ প্রয়োগ স্থগিত রাখার পর নয়াদিল্লি এ পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন মুখপাত্র শুক্রবার জানান, রক্ত জমাট বাঁধার সঙ্গে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার কোনো সম্পর্ক নেই। ইউরোপের বুলগেরিয়া, ডেনমার্ক এবং নরওয়ে এ টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করেছে। শুক্রবার থাইল্যান্ডে অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরুর কথা ছিল। কিন্তু ইউরোপের কয়েকটি দেশে রক্ত জমাট বাঁধার মতো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার খবর আসার কারণে থাইল্যান্ড তাদের এ টিকাদান কার্যক্রম স্থগিত রাখে। ইতালি ও অস্ট্রিয়া সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে এই টিকার নির্দিষ্ট কিছু ব্যাচ ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ডব্লিউএইচওর মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস দাবি করেছেন, ‘অন্যান্য কোভিড টিকার মতোই অক্সফোর্ডের কোভিশিল্ডও একটি অসাধারণ টিকা।’ টিকার সুরক্ষা নিয়ে কোনো সংশয় থাকলে তা পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করেন হ্যারিস। তিনি বলেন, ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ব্যবহারে বাধা নেই। তবে এর সুরক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ে সংশয় থাকলে তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা উচিত। তবে এই মুহূর্তে এ কথা বলা ঠিক নয় যে আমরা তা ব্যবহার করব না।’
এদিকে ভারতের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্সের সদস্য এন কে অরোরা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা সব প্রতিকূল ঘটনা- বিশেষত মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তির মতো মারাত্মক বিরূপ ঘটনাগুলোর দিকে নজর দিচ্ছি। উদ্বেগের কিছু খুঁজে পেলে আমরা এটা বন্ধ রাখব। ভারত বিশাল টিকাদান কর্মসূচির অংশ হিসেবে তার জনগোষ্ঠীর মধ্যে কমপক্ষে ২৮ মিলিয়ন ডোজ করোনার টিকা দিয়েছে, যার সিংহভাগ ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা।
নয়াদিল্লি তার টিকা কূটনীতির অংশ হিসেবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রায় ৭০টি দেশে লাখ লাখ ডোজ টিকা উপহার এবং রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে।
অরোরা বলেন, ‘বিরূপ ঘটনা (ভারতে) সংখ্যার খুব কম হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। রক্ত জমাট বাঁধার কোনো সমস্যা আছে কি-না তা দেখার জন্য আমরা (যেসব প্রতিকূল ঘটনাগুলো রিপোর্ট করা হয়েছে) তা পর্যালোচনা করছি।’
১২মার্চ পর্যন্ত (টিকার প্রতিক্রিয়ায়) এখানে ৫৯ বা ৬০ জন মারা গেছেন এবং সবগুলোই কাকতালীয় ছিল’, চিকিৎকরা বলেছেন, হাসপাতালে ভর্তির কেসগুলো আবারও পরীক্ষা করা হচ্ছে। অরোরা আরও যোগ করেন, ‘আসলে আমরা থেকে প্রকৃতপক্ষেই চেষ্টা করছি যে, সম্পূর্ণ তদন্ত শেষ হয়ে গেলে, এর ফলাফলগুলো জনসাধারণের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, দেশটির কয়েকটি রাজ্যে প্রতিদিনই আরও অনেক বেশি করোনা সংক্রমণের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। মহারাষ্ট্র, কেরালা, পাঞ্জাব, কর্ণাটক, গুজরাট ও তামিলনাড়ুতে প্রতিদিনই সংক্রমণের হার বাড়ছে। ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ হাজার ২৮৫ জন। নতুন সংক্রমণের ৮৫ দশমিক ৬ শতাংশই ঘটেছে উল্লিখিত ছয় রাজ্যে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০৪৫
আপনার মতামত জানানঃ