মেয়েদের বয়স ১২ পার হলে আর প্রকাশ্যে গান গাওয়া যাবে না। তালেবান যুগের এমন আইন জারি করেছে আফগানিস্তান। শিক্ষামন্ত্রীর বরাত দিয়ে ডিডাব্লিউ এমন একটি খবর প্রকাশ করেছে। আর এতে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি তালেবান শাসন ফিরে আসছে আফগানিস্তানে?
ডিডাব্লিউ’র খবরে বলা হয়, ১২ বছরের উপরে কোনো স্কুলছাত্রী প্রকাশ্যে গান গাইতে পারবে না আফগানিস্তানে। একমাত্র ১০০ শতাংশ নারী সমাবেশে গান গাওয়ার অনুমতি আছে। পুরুষদের সামনে কোনো ভাবেই গান গাওয়া যাবে না। পুরুষ গানের শিক্ষকরাও স্কুলে বা অন্য কোথাও মেয়েদের গান শেখাতে পারবেন না। নির্দেশ জারি করেছে আফগানিস্তানের শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আফগান প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে তালেবানের শান্তি বৈঠক চলছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এই ধরনের কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে আফগান সরকার। তালেবানের প্রভাব ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে।
তালেবান আমলে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া, গান গাওয়া, শিল্পচর্চায় বহু নিষেধাজ্ঞা ছিল। তালেবান পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছিল। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক নির্দেশ নতুন করে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বুধবার (১০মার্চ) এই নির্দেশ জারি হওয়ার পরে আফগানিস্তানের নারীরা প্রতিবাদ করতে শুরু করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে মেয়েদের গান গাওয়ার ছবি পোস্ট করে জানিয়েছেন, এটাই দেশের সংস্কৃতি। তালেবান নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
অনেকে আবার সরাসরি শিক্ষামন্ত্রী রঙ্গিনা হামিদিকে আক্রমণ করছেন। তাদের বক্তব্য, হামিদি পরিচিত ছিলেন নারী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে। নারীদের কথা সকলের সামনে তুলে ধরার কথা ছিল তার। তিনি কীভাবে এই নির্দেশ জারি করলেন?
প্রশাসনের সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, অভিভাবকদের অনুরোধেই এই নিয়ম জারি করা হয়েছে। অনেক দিন ধরেই দেশের বড় অংশের অভিভাবকরা বলছিলেন, মেয়েদের গান গাওয়া নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। তারই জেরে এই নিয়ম তৈরি করা হয়েছে। দেশের সমস্ত প্রভিন্সের সমস্ত স্কুলে এই নিয়ম জারি করা হয়েছে। স্কুলের প্রিন্সিপালরা এ বিষয়ে সরকারকে রিপোর্ট দেবেন।
এদিকে আফগানিস্তানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন আফগানিস্তানবিষয়ক মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি জালমে খলিলজাদ। এই সরকারে তালেবানের অংশগ্রহণ থাকার কথা তিনি বলেছেন।
সম্প্রতি খলিলজাদ কাবুলে অংশগ্রহণমূলক একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয় নিয়ে আফগান রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এবং আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, জালমে খলিলজাদ সম্ভাব্য সরকারের একটি নামের তালিকা আফগান নেতাদের কাছে হস্তান্তর করেছেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মতামত দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
খলিলজাদ সোমবার আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেন এবং সেখানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনসহ তালেবানের সঙ্গে আমেরিকার সই হওয়া দোহা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবান ও আমেরিকার মধ্যে শান্তিচুক্তি সই হয়। শান্তিচুক্তি অনুযায়ী বহুসংখ্যক তালেবান বন্দিকে আফগান সরকার মুক্তি দিলেও দেশটিতে সহিংসতা কমেনি।
আবার আমেরিকায় ক্ষমতার পালাবদল হওয়ার কারণে নতুন সরকার ওই চুক্তি অনুসারে আগামী মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এ নিয়ে দোহা শান্তিচুক্তি মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪৫৯
আপনার মতামত জানানঃ