বিশ্বজুড়ে প্রতি তিনজনে প্রায় একজন নারী জীবনে কখনো না কখনো শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে নারীদের প্রতি নৃশংসতা আরো বেড়েছে বলে জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চালানো বিভিন্ন জরিপের ভিত্তিতে এ গবেষণা করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের ৩১ শতাংশ, অর্থাৎ ৮৫ কোটি ২০ লাখের মতো নারী শারীরিক নির্যাতন অথবা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এত বৃহৎ পরিসরে এ ধরনের গবেষণা এর আগে হয়নি।
রয়টার্স ও আল জাজিরার খবরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই প্রতিবেদনের বরাতে জানানো হয়, কিরিবাতি, ফিজি, পাপুয়া নিউগিনি, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব দ্য কঙ্গো, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে নারীদের সহিংসতার শিকার হওয়ার ব্যাপকতার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে জোরালোভাবে।
প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে ডব্লিউএইচও সহিংসতা রোধের জন্য ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সহিংসতার শিকার নারীদের অবস্থার উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক বৈষম্য নিয়ন্ত্রণের তাগিদ দেওয়া হয়েছে এতে। অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে নারী ও শিশুরা ফাঁদে পড়ে সহিংসতার শিকার হন।
লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের জেন্ডার ভায়োলেন্স অ্যান্ড হেলথ সেন্টারের পরিচালক হেইডি স্টোয়েকেল এই গবেষণায় অংশ নেন। তিনি বলেন, গত কয়েক দশকে নারীদের প্রতি সহিংসতার ঘটনায় তেমন কোনও বদল আসেনি। তার মতে, নারীরা যেসব আর্থসামাজিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, তা রোধের জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে পুরো ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। শুধুমাত্র আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি না হওয়ায় অনেক নারী ও মেয়ে পরিবারের সদস্যদের দ্বারা নিপীড়নের শিকার হওয়ার পরও ওই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না।
ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়াসুস বলেন, ‘‘বিশ্বের সব দেশে এবং সব সাংস্কৃতিতে নারীদের উপর নৃশংসতা খুবই নিয়মিত চিত্র। যার ফলে লাখ লাখ নারী এবং তাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারীর সঙ্গে নারী নির্যাতন আরো বেড়ে গেছে।”
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বামী বা সঙ্গীর হাতেই নারীরা সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হন। গরীব দেশগুলোতে এই নির্যাতনের চিত্র রীতিমত হতাশাজনক। তবে নিপীড়িত নারীর প্রকৃত সংখ্যা জরিপে উঠে আসা সংখ্যার থেকেও অনেক বেশি বলে মনে করে ডব্লিউএইচও। কারণ, যৌন নিপীড়নের অনেক ঘটনাই অজানা থেকে যায়।
কোনো কোনো অঞ্চলে অর্ধের বেশি নারীই কোনো না কোনো ভাবে নিপীড়নের শিকার বলে মনে করেন ডব্লিউএইচওর এই জরিপের লেখক ক্লাউডিয়া গার্সিয়া-মরেনো। তিনি রয়টার্সকে বলেন, প্রশান্তমহাসাগরীয় দ্বীপাঞ্চল, সাব সাহারা আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে নারী নির্যাতন বেশি হয়। সবথেকে কম নিপীড়নের শিকার হন ইউরোপের নারীরা, ২৩ শতাংশ। তরুণ বয়স থেকেই নিপীড়নের শুরু হয় বলেও জানায় ডব্লিউএইচও।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০১৯
আপনার মতামত জানানঃ