আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল জানিয়েছে, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার নিরাপত্তা কর্মকর্তারা করোনাভাইরাসের টিকার হাজার হাজার ভুয়া ডোজ আটক করেছে। বুধবার (৩মার্চ) ইন্টারপোলের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী জোহানেসবার্গের বাইরে একটি গুদাম ঘর থেকে প্রায় দুই হাজার চারশ’ ডোজ ভুয়া টিকা ও মাস্ক জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া চীন থেকে ভুয়া টিকা উৎপাদনের একটি চক্রকেও আটক করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
ইন্টারপোল জানিয়েছে, চীন থেকে এ পর্যন্ত ৮০ জনকে গ্রেফতার এবং করোনা ভ্যাকসিনের প্রায় তিন হাজার নকল ডোজ জব্দ করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার একটি গুদাম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে চীন ও জিম্বাবুয়ের নাগরিককে। তবে, গ্রেফতারকৃতদের বিস্তারিত প্রকাশ করেনি ইন্টারপোল।
অভিযান চালিয়ে করোনার নকল টিকার সঙ্গে যুক্ত সন্দেহভাজন কয়েকটি জালিয়াত চক্রকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে ইন্টারপোল বলেছে, অনলাইনে এই মুহূর্তে কোনো অনুমোদিত করোনা টিকা বিক্রি করা হচ্ছে না। সংস্থাটি আরও বলেছে, কোনো অনুমোদিত বা গোপন ওয়েবসাইটে কোনো টিকার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হলে তা হবে অবৈধ। এসব টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়নি। এগুলো বিপজ্জনক হতে পারে।
করোনা মহামারি থেকে বাঁচতে টিকার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। বিভিন্ন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কয়েকটি টিকার অনুমোদন দেওয়ার পর এগুলো কিনতে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা। এই চাহিদাকে পুঁজি করে গজিয়ে উঠছে ওই সব জালিয়াত চক্র।
গত ডিসেম্বরে ইন্টারপোল তার ১৯৪টি সদস্যদেশে একটি বৈশ্বিক সতর্কবার্তা জারি করে। সতর্কবার্তায় কোভিড-১৯ টিকা নিয়ে গড়ে ওঠা সংগঠিত অপরাধ নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য তৈরি থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে দেওয়া হয় জাল চিকিৎসাসামগ্রী শনাক্ত করার পদ্ধতি সম্পর্কে পরামর্শও।
ইন্টারপোল বলেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার জারমিস্টন ও গাওটেং এলাকায় কয়েক হাজার ডোজ নকল টিকা জব্দ করা ছাড়াও বিপুল পরিমাণ নকল ৩এম মাস্ক পাওয়া গেছে। করোনার নতুন ধরনের (স্ট্রেইন) বিরুদ্ধে কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় দেখা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে দেরিতে হলেও গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশজুড়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
এদিকে চীনের জননিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, নকল টিকার সঙ্গে যুক্ত চক্রগুলোকে রুখতে পুলিশ সক্রিয় আছে। ইন্টারপোলের সঙ্গে গঠনমূলক সহযোগিতায় চীনে আরেক অভিযানে গ্রেফতার হয় নকল টিকা তৈরির চক্রে জড়িত কং। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে, স্যালাইন ও পানি দিয়ে বানানো নকল টিকা লাখ লাখ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। আসল টিকার নকশা হুবহু নকল করে করোনা প্রতিষেধকের প্রায় ৫৮ হাজার নকল ডোজ তৈরির কথা স্বীকার করেছে সে।
চীনের আদালতে শুনানি চলাকালে কং জানিয়েছে, নকল টিকাগুলো বেশি দামে বিভিন্ন হাসপাতালে বিক্রি করা হয়। এছাড়া, গ্রামাঞ্চলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নকল টিকা সরবরাহ করে প্রতারক চক্র। গত বছরের আগস্ট থেকে নকল টিকা উৎপাদন ও সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নকল টিকা বিভিন্ন দেশে পাচারের ক্ষেত্রে আসল প্রস্তুতকারকদের অভ্যন্তরীণ চ্যানেলগুলো ব্যবহার করছে এই প্রতারক চক্র।
এ ছাড়া গত মাসে মেক্সিকোতে পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। তারাও নকল টিকা পাচার করছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। জিজ্ঞাসাবাদে সন্দেহভাজন এই ব্যক্তিরা বলেন, একটি ক্লিনিকে নকল টিকা সরবরাহের জন্য প্রতি ডোজ বাবদ তাদের প্রায় দুই হাজার ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
ইন্টারপোলের সেক্রেটারি জেনারেল জুরগেন স্টক বলেন, অপরাধীদের ধরতে এই ফলাফলকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে কোভিড-১৯ টিকা সম্পর্কিত অপরাধের কথা যখন আসে তখন এটি কেবল বিশাল আইসবার্গের সামান্য অংশ। তিনি জানান, অপরাধীরা অনলাইনে এবং অফলাইনে করোনা টিকার বিতরণে লক্ষ্য রাখবে। এই কারণে নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিতে জাতীয় কর্তৃপক্ষকে সম্পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত রেখেছে ইন্টারপোল।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২১১৯
আপনার মতামত জানানঃ