অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কায়েতপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার জালিয়াতি করে জামিন নিয়েছিলেন। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ কারাগারের দুই রক্ষীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদেশে সাত্তার, ঝিনাইদহ কারাগারের দুই রক্ষী কনস্টেবল বিশ্বজিৎ বাবু ও কনস্টেবল খায়রুল আলম, তদবিরকারক চাঁন্দ আলী বিশ্বাস (পিতা-মৃত বজলু বিশ্বাস, গ্রাম- উত্তরপাড়া, ঝিনাইদহ) এবং এফিডেভিটকারী আসামি সাত্তারের পিতা নিজামুদ্দিনকে আসামি করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তদন্তে আইনজীবী জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার এ আদেশ দেন। আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শেখ আতিয়ার রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক।এদিকে উচ্চ আদালতে একের পর এক জালিয়াতির ঘটনায় হাইকোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আদালত বলেছেন, ‘জালিয়াতচক্র নথি জাল করে কত জামিন আদেশ হাসিল করে কে জানে? হয়তো আমরা সব ধরতে পারি না। কিন্তু নথি সৃজন করে এ রকম জামিন জালিয়াতির ঘটনা তো ঘটছে। অনেক জালিয়াতি হচ্ছে।’
গতকাল আদেশের আগে আসামিপক্ষের আইনজীবী শেখ আতিয়ার রহমানকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, ‘জালিয়াতচক্র আপনাকে চিনল কিভাবে? জালিয়াতচক্র আপনার ওপর ভর করেছে কেন? আরো দুটি জামিন জালিয়াতির মামলায় আপনি ও আপনার ক্লার্ক সোহেল রানার নাম এসেছে। মামলা পেলেন আর দাঁড়িয়ে গেলেন? একজন সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে কি আপনার কোনো দায়িত্ব নাই?’ জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘জালিয়াতির বিষয়টি জানতে পেরে আসামির এলাকায় আমার ছেলে ও দুই সহকারীকে পাঠিয়ে তথ্য যাচাই করে তা নিয়ে আদালতে দাখিল করেছি। শেষ বয়সে এসে এমন পরিস্থিতির জন্য আমি লজ্জিত।’
এ সময় আদালতে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক আসামিপক্ষের আইনজীবীকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘উনি বৃদ্ধ মানুষ। উনি জালিয়াতচক্রের তিনজনের নাম আদালতে দিয়েছেন। ওই আবেদন গ্রহণ করে তাঁকে অব্যাহতি দিন।’
জানা যায়, পুলিশ ২০১৮ সালের ২ মে রাতে অস্ত্র ও গুলিসহ সাত্তারকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন সাত্তারের নামে অস্ত্র আইনে একটি মামলা হয়। ওই বছরের ৬ জুলাই সাত্তারকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলায় ওই বছরের ৩১ অক্টোবর সাত্তারকে অস্ত্র আইনের দুটি ধারায় ১৭ বছরের সাজা দেন আদালত। নিম্ন আদালতের ওই রায় জাল করে আগ্নেয়াস্ত্রের পরিবর্তে ‘চায়নিজ কুড়াল’ উদ্ধার দেখিয়ে ভুয়া এজাহার ও রায় বানিয়ে তা হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। কিন্তু ওই আসামির দাখিল করা নথিপত্র নিয়ে তাঁর আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ আতিয়ার রহমানের সন্দেহ হওয়ায় আইনজীবী নিজেই অনুসন্ধান চালান। তাঁর অনুসন্ধানে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর ওই আইনজীবী গত ২১ সেপ্টেম্বর বিষয়টি লিখিতভাবে আদালতকে জানান। এরপর আদালত সাত্তারের জামিন আদেশ প্রত্যাহার করে আদেশ দেন।
আপনার মতামত জানানঃ