চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রূপম কান্তি নাথ নামের এক বন্দিকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বৈদ্যুতিক শক এবং বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগে জেল সুপার, জেলারসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার(০১ মার্চ) মহানগর হাকিম ২ এর বিচারক হোসাইন মো: রেজার আদালতে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী পাহাড়তলীর বাসিন্দা ঝর্ণা রাণী দেবনাথ।
মামলায় সাতকানিয়া উপজেলার মৌলবীর দোকান এলাকার রতন ভট্টাচার্য, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার, জেলার ও জেলখানায় কর্তব্যরত সহকারী সার্জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় আরও বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামিও করা হয়েছে।
বাদীর আইনজীবী ভুলন লাল ভৌমিক গণমাধ্যমকে বলেন, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের ১৩ (১) (২) এর (ক) (খ) (গ) ধারায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে আদেশের জন্য রেখেছেন। মঙ্গলবার (আজ) আদেশ হতে পারে।
তিনি বলেন, অসুস্থ রুপম কান্তি নাথ বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিরাপদ-হেফাজত আইন ২০১৩ মামলা দায়ের করেছি।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, এজাহারভুক্ত আসামি রতন ভট্টাচার্যের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত একটি মামলায় (জিআর মামলা নম্বর ৩৩২/১৮) গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর কারাগারে যান ভুক্তভোগী রূপম কান্তি দেবনাথ। চলতি বছরের ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে রূপমকে (বাদীর স্বামী) অন্যায়ভাবে বিচারাধীন মামলায় জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য এবং স্থায়ীভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন করার জন্য শারীরিক নির্যাতন, বিষাক্ত নেশা জাতীয় দ্রব্য পুশ ও বৈদ্যুতিক শক দিয়ে নির্যাতন করেছেন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, নির্যাতনের খবর পেয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বন্দি রূপম কান্তি নাথের উন্নত চিকিৎসার জন্য আদালতে আবেদন করেন মামলার বাদী। আদালত আবেদনটি মঞ্জুরও করেন। আসামিরা নিজেদের অপরাধ ঢাকতে রূপমকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালটির ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
ইতিমধ্যে আসামিরা রুপমকে কারা হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে আসামিরা আলামত লুকানোর চেষ্টা করে। বিষয়টি হাসপাতালের পরিচালক বরাবরে জানানো হয়েছে। নির্যাতন করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয় মামলায়।
অভিযোগের বরাত দিয়ে আইনজীবী ভুলন বলেন, ‘আসামী রতন এবং ভুক্তভোগী রুপম ব্যবসায়ী অংশীদার। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর রতনের দায়ের করা একটি মামলায় সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে যান রুপম। সেই থেকে তিনি কারাগারের ভেতরে সাংগু ভবনে আছেন।’
তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে কারাগার থেকে রুপমের স্ত্রীকে ফোন করে জানানো হয় তার স্বামী অসুস্থ এবং তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আরও বলা হয় যে চিকিৎসার ব্যয়ভার জেল কর্তৃপক্ষ বহন করবে। এ ঘটনার পর আদালতে ভুক্তভোগীর স্ত্রী তার স্বামীর উন্নত চিকিৎসার জন্য আদালতে আবেদন করলে আদালত গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তা মঞ্জুর করেন বলে জানান অ্যাডভোকেট ভুলন।
তিনি বলেন, ‘একে অপরের যোগসাজশে রতনের প্ররোচনায় জেল কর্মকর্তারা হেফাজতে থাকা অবস্থায় রুপমের স্বীকারোক্তি আদায় ও মানসিক ভারসাম্যহীন করার জন্য তাকে শারীরিক নির্যাতন করায় আসামিদের বিরুদ্ধে হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে,’
জানতে চাইলে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, অসুস্থ হওয়ার পর কারা হাসপাতালে ও চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয় ওই বন্দীকে। তাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তিগত রেশ মেটানোর হাতিয়ার হয়ে উঠেছে দেশের আইন। আইনের সাথে জড়িত কর্তাব্যক্তিরা এর অপব্যবহারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিলের রেওয়াজ প্রচলিত। কারাগারে বন্দিকে কেন নির্যাতন করা হয়েছে এবিষয়ে আসামিদের তদন্ত করলে অনেক কিছুই বেরিয়ে আসবে। কদিন আগে বন্দিকে নারীসঙ্গের ব্যবস্থা করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল কেন্দ্রীয় কারাগারের কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। এখন অমানবিকভাবে বন্দিকে নির্যাতনের অভিযোগ এলো। এ থেকে দেশের কারাগারগুলোর এক ভয়ানকতম চিত্র উঠে আসে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তারা এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে আসামিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০৫
আপনার মতামত জানানঃ