সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংকে গোপনে কার কত টাকা পাচার করে পাঠানো হয়েছে বা আছে তার তথ্যসহ তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পাচার হওয়া ওইসব টাকা ফেরত আনতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। প্রতিবেদন দাখিলের পরে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৩০শে মার্চ দিন ধার্য করেছেন আদালত। রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ুম খান ও এডভোকেট সুবীর নন্দী দাস। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে বাংলাদেশি কোনো নাগরিক অথবা কোম্পানি বা অন্য কোনো সংস্থার অর্থ পাচার, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অর্থায়নের বিষয় নিরীক্ষণ, পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তাও জানতে চেয়েছে আদালত। এছাড়া পানামা ও প্যারাডাইস পেপারে যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে তদন্ত করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
নাগরিক ও কোম্পানির নাম এসেছে, তাদের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না এবং সে তদন্তের অগ্রগতি প্রতি মাসে আদালতকে জানাতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব, অ্যাটর্নি জেনারেল, অর্থ সচিব, বাণিজ্য সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্ট ১৫ জনকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
অর্থসচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাণিজ্য সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মের পরিদপ্তরের রেজিস্ট্রার ও পুলিশপ্রধানকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আগামী ৩০ মার্চ পরবর্তী শুনানি ও আদেশের তারিখ রেখেছেন আদালত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘দ্বৈত নাগরিকের তালিকা দেওয়ার বিষয়ে আমরা সময় চেয়েছিলাম। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি তা হচ্ছে, কম-বেশি মিলিয়ে প্রায় ১৪ হাজারের মত দ্বৈত নাগরিক আছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাসপোর্ট জমা দিয়ে তারা ঘোষণা দিয়েছেন। সে তালিকা এখনো আমরা হাতে পাইনি। অনেক বড় ব্যাপার তৈরি করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে ৩০ মার্চ শুনানি হবে।’
শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, কারা পাচারকারী তাদের বিষয়ে তথ্য প্রকাশে আইনগত কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিট(বিএফআইইউ) ওই তালিকা শুধুই তদন্তের কাজে ব্যবহার করতে পারবে। আদালত বলে, ভারতের আদালতেও রাষ্ট্রপক্ষ থেকে একই বক্তব্য দেয়া হয়। কিন্তু সেখানকার সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়ে বলেছে আদালত যে কোনো তথ্য চাইতে পারে। শুনানি শেষে রুল ও আদেশ জারি করে হাইকোর্ট।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১০৫৫
আপনার মতামত জানানঃ