করোনাভাইরাস সৃষ্ট মহামারি প্রতিরোধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার (এক কোটি ৬১ লাখ ৬ হাজার কোটি ৭০ লাখ টাকার বেশি) করোনা তহবিল বিল’ অনুমোদন পেয়েছে। স্থানীয় সময় শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে করোনা রিলিফ এ বিলটি দেশটির নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে পাস হয়। এবার সিনেটের অনুমোদনের অপেক্ষা।
২৭ ফেব্রুয়ারি হাউজে ২১২-২১৯ ভোটে অনুমোদিত এ বিলের পক্ষে কোনো রিপাবলিকান ভোট দেননি। তবে দুই ডেমোক্র্যাট এটির বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার একজন নির্দলীয় কর্মকর্তা বলেছিলেন, বিলটি সিনেটে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। প্যাকেজটির সঙ্গে ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টায় ১৫ ডলারের বিষয়টি অনুমোদন পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
রিপাবলিকানদের ভোট ছাড়াই ডেমোক্র্যাটরা প্রণোদনা প্যাকেজটি দ্রুত বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে বিলটি সিনেটে উত্থাপন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর এখানেই ন্যূনতম মজুরি দ্বিগুণ করার বাইডেনের পরিকল্পনাটি বাদ পড়তে পারে।
মহামারীতে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে দাঁড় করাতে এটিকে বাইডেনের উচ্চাভিলাসী পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হিসেবে দেখা হচ্ছে। আর বিলটি বিস্তৃতভাবে জনপ্রিয়। কারণ স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সংকটে অন্যান্য সম্প্রদায়ের চেয়ে আমেরিকানরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বিলের ফলে কমপক্ষে ১০ লাখ বাংলাদেশি আমেরিকানসহ সাড়ে ৮ কোটি মার্কিন নাগরিক উপকৃত হবেন। পর্বতসম এই বিলে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আরও দৃঢ় হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
হাউজের বাজেট কমিটির চেয়ারম্যান জন ইয়ারমুথ বলেন, আমরা সময়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। কার্যত প্রত্যেকেই বুঝতে পারে এটি কতটা সংকটপূর্ণ অবস্থা। এখনই মহামারীটি বন্ধ করার কিংবা আমাদের পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য নয়; বরং আমাদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ভিত্তি সরবরাহ করতে হবে। যদিও এজন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে।
আগের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতার মেয়াদ শেষ হতে যাওয়ায় আগামী ১৪ মার্চ থেকে লাখ লাখ মানুষ বেকারত্ব সুবিধা হারাতে চলেছে। এজন্য সিনেটে অনুমোদন নিয়ে বিলটি বাইডেনের ডেস্কে পৌঁছানোর তাড়া রয়েছে। যদিও বিলটি সিনেটে রিপাবলিকানদের সমর্থনের কোনো লক্ষণ নেই। তারা প্রণোদনা পরিমাণ, সরকারি ঋণ ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি নিয়ে সমালোচনা করছেন।
উত্তর ক্যারোলাইনার রিপাবলিকান প্রতিনিধি প্যাট্রিক ম্যাকহেনরি বলেছেন, কেউ তর্ক করছে না যে সংকট উত্তরণের জন্য কিছু করার দরকার নেই। আমরা যা বলছি, তা এই প্রণোদনা প্যাকেজকে লক্ষ্য করে।
এ বিলের সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, বার্ষিক ৭৫ হাজার কিংবা দম্পতি হিসেবে বার্ষিক ১ লাখ ৫০ হাজারের নিচে আয় করা করদাতাদের প্রত্যেককে ১ হাজার ৪০০ ডলার করে নগদ অর্থসহায়তা দেয়া হবে। এর আগের প্রণোদনায় একেকজন বার্ষিক ১ লাখ ডলার এবং দম্পতি হিসেবে ২ লাখ ডলারের নিচে আয় করা ব্যক্তিদের সহায়তা দেয়া হয়েছিল। নতুন এ প্রণোদনা বেকারত্বের সুবিধাকে আগামী আগস্ট পর্যন্ত বর্ধিত করতে চলেছে।
এছাড়া এটি বেকারত্ব সুবিধা সপ্তাহে ৩০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৪০০ ডলারে উন্নীত করবে। এ বিলের আওতায় কভিড-১৯ টিকা, পরীক্ষা ও সেবা দেয়ার জন্য এবং বিদ্যালয়গুলোকে তহবিল সরবরাহ করা হবে। পাশাপাশি শিশু কর ক্রেডিট এবং অস্থায়ী স্বাস্থ্যসেবা প্রিমিয়াম ভর্তুকিসহ অন্য খাতগুলোয় অর্থ সরবরাহ করবে।
হাউজ ও সিনেটের প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাট নেতারা ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের বিলটি পাস করার জন্য তাদের সব—৫০ সদস্যের ভোটের প্রয়োজন। যেহেতু রিপাবলিকান ৫০ সিনেটর এ বিলের বিরোধিতা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আবার দুজন ডেমোক্র্যাট সিনেটর পশ্চিম ভার্জিনিয়ার জো ম্যাঞ্চিন এবং অ্যারিজোনার ক্রেস্টেন সিনেমা জানিয়েছেন, তারা খসড়া হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় ন্যূনতম মজুরি ১৫ ডলার সমর্থন করেন না। তাই সাধারণ অর্থে বলা যায়, ন্যূনতম ১৫ ডলার মজুরির বিষয়টি সিনেটেই আটকে যাচ্ছে।
প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি আশা করছেন, সময়ের দাবি অনুযায়ী সিনেটও বিলটি পাস করবে। তার মতে, সারা যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ংকর একটি পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনেক মানুষ দু’বেলা খাবার পাচ্ছে না। শিশুদের অধিকাংশই পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে দিনাতিপাত করছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের দৃশ্য হতে পারে না।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২২১৩
আপনার মতামত জানানঃ