জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের দূতকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে বিভিন্ন দেশের সহযোগিতা চেয়ে জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার পর শনিবার তাকে বরখাস্ত করলো দেশটির সামরিক সরকার। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এখবর জানিয়েছে।
শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রদূত কিয়াও মোয়ে তুন দেশটির জনগণের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রদানে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া মিয়ানমার প্রশ্নে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এক বিশেষ অধিবেশনে সব সদস্য রাষ্ট্রকে অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতিতে দেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।
শনিবার ( ২৭ ফেব্রুয়ারি) কিয়াও মোয়ে তুনকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। বরখাস্তের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তিনি দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন এবং একটি অস্বীকৃত সংস্থার হয়ে কথা বলেছেন যা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে না। তার বিরুদ্ধে দূত হিসেবে ক্ষমতা ও দায়িত্বে অপব্যবহারেরও অভিযোগ এনেছে জান্তা সরকার।
কিয়াউ মো তুন জাতিসংঘের ভাষণে বলেন, অবিলম্বে সামরিক অভ্যুত্থানের অবসান, নিরপরাধ জনগণের ওপর নিপীড়ন বন্ধ করা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আমাদের আরও কঠোর সম্ভাব্য পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে। অবিলম্বে সামরিক অভ্যুত্থানের অবসান ঘটাতে, নিরীহ লোকজনের ওপর নির্যাতন বন্ধে, জনগণের কাছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সম্ভাব্য কঠোরতম পদক্ষেপ প্রয়োজন আমাদের।
বার্মিজ ভাষায় শেষ বাক্য বলে এ কূটনীতিক গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের তিন-আঙুল প্রদর্শন করেন এবং ঘোষণা দেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্যই বিজয়ী হবে’। এ ঘটনার পর শনিবার ইয়াঙ্গুন পুলিশ সামরিক শাসন বিরোধীদের দমনে কঠোর পদক্ষেপের দিকে গেছে। রাষ্ট্রদূতের এই বক্তব্যকে বিপুল করতালি দিয়ে স্বাগত জানান সাধারণ পরিষদের সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা।
মিয়ানমার নিয়ে বিশেষ বৈঠকে কিয়াও মোয়ে তুন জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর প্রতি তার দেশের সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিবৃতি জারি করে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানানোর আহ্বান জানান। রাষ্ট্রগুলোকে তার দেশের সেনাশাসকদের স্বীকৃতি প্রদান বা তাদের সহযোগিতা না করার অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি গত বছর মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি জান্তাশাসকেরা যাতে শ্রদ্ধা দেখায়, সে লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টি করার দাবি জানান।
এদিকে শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধীদের ওপর দমনাভিযান তীব্রতর করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম কয়েক ডজনকে গ্রেপ্তার এবং মনয়ি শহরে এক নারী গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর দিয়েছে। ওই নারীর অবস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে অং সান সু চিসহ ক্ষমতাসীন দল এনএলডির শীর্ষ নেতাদের আটক করার পর দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে। ওই দিনই অং সান সুচি’র নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে তাকে গৃহবন্দী করা হয়। গত তিন সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে প্রতিদিনই সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-ধর্মঘট চলছে। ইতোমধ্যে বিক্ষোভকারীদের ওপর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দমন-পীড়ন ছাড়াও হামলা চালিয়েছে সেনা অভ্যুত্থান সমর্থকেরাও।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১২৩৭
আপনার মতামত জানানঃ