দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির দায়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক বিষ্ণু কুমার অধিকারীকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে ৬ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৫০৪তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হয়রানির অভিযোগের সত্যতা সংক্রান্ত প্রতিবেদন আজকে সিন্ডিকেটে উপস্থাপিত হয়। সেখানে ওই শিক্ষককে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ছয় বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে, পাশাপাশি তার ইনক্রিমেন্ট বন্ধ এবং আগামী ১০ বছর কোনো প্রমোশন আবেদন করতে পারবেন না মর্মেও সুপারিশ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের আগে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগামী সিন্ডিকেটে বিষয়টি আবারও তোলা হবে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৫ ও ২৭ জুন ইনস্টিটিউটের শিক্ষক বিষ্ণু কুমার অধিকারীর বিরুদ্ধে দুই শিক্ষার্থী উত্ত্যক্ত ও যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর ২ জুলাই অভিযোগ আমলে নিয়ে ইনস্টিটিউটের সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে ওই শিক্ষককে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেলে পাঠানো হয় অভিযোগটি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করেন সেলের সভাপতি ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজিনা লাজ, রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক ড. আখতার ফারুক ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক হাবিবুর রহমান।
তদন্ত কমিটির প্রধান প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজিনা লাজ বলেন, ‘তদন্তে অভিযোগটির সত্যতা পেয়েছি। মাস দেড়েক আগে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। আজকের সিন্ডিকেটে বিষয়টি ওঠার কথা ছিল। তবে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে সে বিষয়ে এখনো জানি না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিষ্ণু কুমার অধিকারী গণমাধ্যমকে বলেন, আমি সিন্ডিকেট সভার কোনো কাগজ পাইনি। কাগজ পেলে অফিসিয়ালি জানাবো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্যাম্পাসে যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। রঙিন স্বপ্ন নিয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করতে এসে উল্টো অনেক ছাত্রী নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরছেন। নির্যাতনের শিকার হয়ে কেউ কেউ ক্ষোভ, ঘৃণা কিংবা লজ্জায় নিজেকে সঁপে দিচ্ছেন আরও অন্ধকার পথে। এভাবে অসময়ে খসে পড়ছে বহু নক্ষত্র। মূলত মেধাবী ছাত্রীরাই তাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বেশি।
সংশিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সব প্রতিষ্ঠানেই নারীরা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে থাকেন৷ উচ্চ আদালতের আদেশের পরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এই নীতিমালা প্রণয়নে খুবই অনাগ্রহী।কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠলে তদন্তের নামে সময়ক্ষেপণ করে বিষয়টি হালকা করে ফেলা হয়৷ ফলে ওই শিক্ষার্থী ন্যায়বিচার পান না৷ দ্রুত যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং তার সঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষকের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলেই এই প্রবণতা কমবে৷
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯০০
আপনার মতামত জানানঃ