করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন। বর্তমানে তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। টিকা নেয়ার ১২ দিন পর তার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হলো। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. সেলিম হোসেন।
মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সেলিম জানান, গত ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা নেন সচিব। ১৯ ফেব্রুয়ারি করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ আসার পর উনার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় ও অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যায়। সে কারণে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন শ্বাসকষ্ট কমেছে, অক্সিজেন স্যাচুরেশনও ভালো।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে করোনার গণ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর দেশে এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ২৬ লাখের বেশি মানুষ। কিছুসংখ্যক মানুষের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবরও পাওয়া গেছে। কিন্তু টিকা নেয়ার পর প্রথমবারের মতো কারও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেল। এই ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। শুরু হয়েছে নানা আলোচনা।
টিকা নেওয়ার পরও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, যারা টিকা নিচ্ছেন, তাদের একটি অংশও আক্রান্ত হতে পারেন। সেটা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে এবং সব ধরনের টিকাতেই তা হতে পারে। এছাড়া টিকার এক ডোজেও পুরোপুরি কাজ হবে না। দুই ডোজ দিতে হবে। দুই ডোজ দেওয়ার পরই টিকা কতভাগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করবে তা বোঝা যাবে। টিকা নেওয়া থাকলে আক্রান্ত হলেও সিভিয়ারিটি কমে যাবে। সচিব মহোয়দের ক্ষেত্রে কী হয়েছে তা খতিয়ে দেখে বলা যাবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট নজরুল ইসলাম বলেন, শরীরে করোনার জীবাণু প্রবেশের পর যদি তারা টিকা নেন, তাহলে সেটা কাজ না–ও করতে পারে। কারণ, ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের পর এর শক্তিকাল ১৫ দিন। তার আগেই তারা আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। তিনি আরও বলেন, টিকার বুস্টিং ডোজ বা দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। তবে কারও যদি নানা শারীরিক সমস্যা বা ইমিউনিটি সিস্টেম দুর্বল থাকে, তাহলে তিনি আবারও আক্রান্ত হতে পারেন। তবে সে সংখ্যা ১০ হাজারে একজন হতে পারে।
এদিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার সাজ্জাদ হোসেন টিকা নেওয়ার পর ২৩ ফেব্রুয়ারি করোনা পজেটিভ হন। ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি টিকা নিয়েছিলেন।
টিকা নেওয়ার পর স্বাস্থ্যকর্মী সাজ্জাদ হোসেনের করোনায় আক্রান্ত হওয়া প্রসঙ্গে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল কাজী মোহাম্মদ রশিদ–উন–নবী বলেন, যেদিন তিনি (সাজ্জাদ হোসেন) টিকা নেন, সেদিন থেকেই তার জ্বর ছিল। তবে তার শরীরে হয়তো আগে থেকেই করোনার জীবাণু ছিল। সাজ্জাদ হোসেন এখন বাসায় আইসোলেশনে আছেন।
বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা। সবাইকে এ টিকার দুটি ডোজ নিতে হবে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছিল, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে তাদের এই টিকা নিরাপদ প্রমাণিত হয়েছে এবং ৭০ শতাংশ স্বেচ্ছাসেবীকে কার্যকর সুরক্ষা দিতে পেরেছে।
এই টিকা দেওয়ার পর কারও কারও হালকা জ্বর, গা ব্যথা, ক্লান্ত বোধ করার মত সাধারণ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও তা নিয়ে আতঙ্ক বা অস্বস্তির কারণ নেই বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। আর বাংলাদেশে যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে মারাত্মক কোনা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবরও আসেনি।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০১৫
আপনার মতামত জানানঃ