করোনায় হানায় লণ্ডভণ্ড পুরো বিশ্ব। এরমধ্যে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে করোনার ভিন্ন ভিন্ন ধরন। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ইরানের উদ্ভাবিত টিকার প্রাথমিক ফলাফলে ৯০ ভাগ কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। মানবদেহে ট্রায়ালের প্রথম পর্যায়ে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের ওপর এই টিকা আশাতীত সাফল্য দেখিয়েছে।
ইরানের উদ্ভাবিত কোভইরান বারেকেত টিকা প্রকল্পের প্রধান মোহাম্মদ রেজা সালেহি বলেন, প্রথম দফায় পরীক্ষামূলকভাবে টিকা গ্রহণকারীদের ৩৫ স্বেচ্ছাসেবককে নিরীক্ষণ করে দেখা গেছে, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রত্যাশার চেয়ে উত্তমভাবে কাজ করছে। তিনি জানান, ট্রায়ালের সময় যারা এ টিকা নিয়েছেন তাদের ৯০ শতাংশের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম। তবে আরও নিখুঁত ফলাফল পেতে আরও বেশি পরীক্ষা চালানো দরকার বলেও জানান তিনি। যুক্তরাজ্য থেকে সংক্রমিত করোনার নতুন স্ট্রেইন বা ধরন প্রতিরোধে এ টিকা শতভাগ কার্যকরী বলে এর আগে ইরানি কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন।
গত ডিসেম্বরে মোট ৫৬ জন স্বেচ্ছাসেবী কোভিরান বারেকাত টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেন। এ মাসের শুরুতে দ্বিতীয় ডোজও দেওয়া হয় তাদের। মানবদেহে দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু হবে চলতি বছরের মার্চে, শেষ হবে মে মাসে।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রধান মোহাম্মদ রেজা সালেহি বলেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের ফলাফল এক সঙ্গে করা হবে এবং এর প্রাথমিক প্রতিবেদন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুসরণ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশটির বারাকেত ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ যৌথভাবে কোভইরান নামে প্রথম করোনার টিকা আবিষ্কার করে ইরান।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির অধীনে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সংস্থা ‘সেতাদ’-এর মাধ্যমে কোভিরান বারেকাতের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে করোনা প্রতিরোধে এটিই ইরানের একমাত্র ভরসা নয়। এ মাসের শুরুতেই দেশটি জানিয়েছিল, তারা ‘রাজি কোভ-পার্স’ নামে আরেকটি টিকার গবেষণা শুরু করেছে। শিগগিরই টিকাটির মানবদেহে ট্রায়াল শুরু হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সাধারণ নিয়মে টিকার তৈরি করতে এক-দুই বছর লাগে। যেহেতু করোনাভাইরাসে মৃত্যু অনেক বেশি এবং এই ভাইরাস অসংখ্য সমস্যার জন্ম দিচ্ছে, এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনার টিকা জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।
এর পাশাপাশি ইরান অক্সফোর্ড-অ্যাসট্রাজেনেকা, চীন ও ভারতের থেকেও টিকা পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। করোনার তিনটি ঢেউতে এরইমধ্যে ইরানে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। বর্তমানে দেশটির সরকার চতুর্থ ঢেউর আঘাত আসার আশঙ্কা করছে।
এর আগে পশ্চিমা কোনো দেশ থেকে নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ৮ জানুয়ারি, ২০২১ টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের কভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেশে আমদানি নিষিদ্ধ… তারা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তারা সম্ভবত অন্যান্য দেশের মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। এ সময় ফ্রান্স থেকেও ভ্যাকসিন আমদানি না করার কথা বলেন খামেনি। তিনি বলেন, ফ্রান্সের এইচআইভি-দূষিত রক্ত সরবরাহের সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফরাসি ভ্যাকসিনও বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি বলেন, ইরান অন্যান্য নির্ভরযোগ্য জায়গা থেকে’ভ্যাকসিন আনবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৬৫৪
আপনার মতামত জানানঃ