মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ সহিংস হয়ে উঠছে। আজ শনিবার দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছে পুলিশ। এতে দুজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে চিকিৎসক ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়।
সংবাদ মাধ্যম ডয়েচ ভেলের বরাতে জানা যায়, শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি শহরে আজ অভ্যুত্থান বিরোধীরা রাস্তায় নেমে এসে সামরিক শাসনের অবসান ও নেত্রী অং সান সু চিসহ অন্যান্যদের মুক্তির দাবিতে শ্লোগান দেয়। প্রতিবাদ বিক্ষোভে সংখ্যালঘু বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাসহ কবি ও পরিবহন শ্রমিকরাও যোগ দেন।
মান্ডালেতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল ছোড়ে। জবাবে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছোড়ে ও গুলি চালায়। তবে এটি রাবার বুলেট নাকি লাইভ রাউন্ড গুলি তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ভয়েস অব মিয়ানমারের সহকারী সম্পাদক লিন খাইয়াংসহ একাধিক গণমাধ্যম কর্মী জানিয়েছেন, মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন মারা গেছেন। এক স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক দু’জন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, একজন মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। আরেকজন বুকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার কিছুক্ষণ পরে মারা যান। এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ শুরুর পর গতকাল শুক্রবার প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ২০ বছর বয়সী মিয়া থোতে থোতে খায়ং নামের এক বিক্ষোভকারী রাজধানী নেপিডোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৯ ফেব্রুয়ারি নেপিডোতে সেনাশাসনবিরোধী বিক্ষোভকালে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।
গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এক অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাসীন দল এনএলডি’র নেতা অং সান সু চি ও সরকারের মন্ত্রীদের আটক করে। এর কয়েকদিন পর থেকেই হাজার হাজার জনতা সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে দেশটির বিভিন্ন রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু করে। অভ্যুত্থানের পর থেকে শত শত বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী যারা ধর্মঘটের ডাক দিয়ে কাজে ইস্তফা দিয়েছেন।
এদিকে সামরিক অভ্যুত্থানের জেরে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আসছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর উপর। যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার মিয়ানমারের বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য ও কানাডা। বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী তিন জেনারেলের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও ভ্রমণ নিষিদ্ধ করছে ব্রিটেন। অন্যদিকে, কানাডা ৯ জেনারেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের প্রতি সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় হুঁশিয়ার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। সম্প্রতি তিনি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নিতে মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস শুক্রবার বলেছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে আমরা আবারও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের প্রতি সহিংস আচরণ থেকে সরে আসতে আহ্বান জানিয়েছি। আচরণ পরিবর্তনের জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর চাপ প্রয়োগ করতে আমরা মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে কাজ করছি।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছে, গণতান্ত্রিকভাবে আয়োজিত নির্বাচন শেষে বিজয়ীদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়া হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২১০০
আপনার মতামত জানানঃ