জলবায়ুর পরিবর্তন আজ এক স্বীকৃত সত্য, বাস্তব ঘটনা৷ তাপমাত্রা বাড়ছে৷ ঘটছে পৃথিবী নামের গ্রহটির উষ্ণায়ন৷ উষ্ণতা বাড়ার কারণে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের হার বাড়বে বলেও আশংকা৷ মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা শতকোটিপতি বিল গেটস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধান করা হবে মানবতার জন্য সবচেয়ে আশ্চর্যজনক কাজ। এর চেয়ে কোভিড মোকাবিলা করা অনেক সহজ। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। তার নতুন বই ‘হাউ টু অ্যাভোয়েড অ্যা ক্লাইটমেট ডিজাস্টার’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এসব কথা বলেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা।
প্রযুক্তি কীভাবে এই সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে তার ওপর গুরুত্ব দেন বিল গেটস। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলা করাই হবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক মানবিক কাজ। তবে এর তুলনায় খুবই সহজ করোনা মোকাবিলা।
পৃথিবীতে প্রতি বছর যোগ হচ্ছে ৫১ বিলিয়ন গ্রিন হাউস গ্যাস। এই সংখ্যা শূন্যতে নামিয়ে আনার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি। সম্প্রতি জলবায়ু বিষয়ে নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে বিল গেটসের। কীভাবে জলবায়ু বিপর্যয় এড়ানো যায়, বিশ্ব উষ্ণায়নের মোকাবিলার জন্য এটি একটি গাইড বলা যায়। ৫১ বিলিয়ন হলো বিশ্ব প্রতিবছর সাধারণত যত টন গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ করে। আর শূন্য হলো এই নিঃসরণ কমানোর যে লক্ষ্যে আমাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত। গেটসের মূল ফোকাস হলো প্রযুক্তি কীভাবে আমাদের সেই যাত্রায় পৌঁছাতে সহায়তা করবে তার দিকে। বায়ু এবং সৌরের মতো নবায়নযোগ্য উৎসগুলো আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে সহায়তা করতে পারে। তবে এটি মোট নিঃসরণের ৩০ শতাংশেরও কম কমাতে সাহায্য করবে। বাকি ৭০ শতাংশ আসে নানা রকম শিল্পোৎপাদনের কারখানা থেকে। এই খাতগুলো ছাড়া এখন অবশ্য আমাদের উপায়ও নেই। গেটস বলেন, ‘এই মুহূর্তে কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ করার সঙ্গে সঙ্গে আপনি যে ক্ষতি করছেন, তা দেখতে পাচ্ছেন না।’ সে কারণেই গেটস বলছেন, এ সমস্যা মোকাবিলায় সরকারগুলোকে হস্তক্ষেপ করতে হবে।
ইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতার ভাষ্য, ‘করোনা মহামারি ভয়ংকর, তবে জলবায়ু পরিবর্তন এর চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কী ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে, তা বুঝতে কোভিড-১৯–এর ছড়িয়ে পড়া এবং দীর্ঘ সময় ধরে মানুষের ভোগার দিকটিতে দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে। এ মহামারিতে মানুষের প্রাণ হারানোর পাশাপাশি আর্থিক দুর্দশা আমরা লক্ষ করেছি। এখন আমরা যদি কার্বন নির্গমন দূর করতে না পারি, তবে এ দুর্দশার বিষয়টি আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠবে।
গেটস পূর্বাভাস দিয়েছেন, আগামী ২০ বছরের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি এতটাই খারাপ হবে যে প্রতি দশকেই একবার করে কোভিড-১৯ মহামারি ঘটার মতো বিষয় হবে।
বিল গেটস বলেন, ‘কোভিড-১৯ থেকে যদি আমরা শিক্ষা নিতে পারি, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা না নেওয়ার ফল সম্পর্কে আমরা বোঝাতে সক্ষম হব। আমরা সম্ভাব্য ক্ষতি ঠেকাতে ও জীবন রক্ষার্থে আরও প্রস্তুত থাকতে পারব। বর্তমান বৈশ্বিক সংকট–পরবর্তী সংকট সম্পর্কে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমাদের বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। প্রয়োজনীয় সমাধান বের করার কাজও করতে হবে।’
গেটস বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অবশ্যই কোভিড-১৯–এর তুলনায় আরও কঠিন হবে। যারা এটা ঘটতে দেবে, তাদের জন্য এটি আরও খারাপ ফল বয়ে আনবে। যেসব দেশ এ সমস্যা বেশি সৃষ্টি করছে, তাদেরই এর সমাধান বের করার দায়িত্ব।’
বিল গেটস এর আগে পৃথিবীর সংকট সৃষ্টিকারী ভাইরাস নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। ২০১৫ সালে কানাডার ভ্যাংকুভারে এক সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ‘আগামী কয়েক দশকে যদি কোনো কিছুতে এক কোটি লোকের মৃত্যু হয়, সেটা হয়তো হবে অত্যন্ত সংক্রামক একটা ভাইরাস, কোনো যুদ্ধ নয়।’
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩১৭
আপনার মতামত জানানঃ