নিজ প্রাসাদের অন্দরমহলে প্যাট্রিক ডাইটার। ছবি: জুমা প্রেস
ফ্রান্সের প্রোভিন্স অঞ্চলে ৫৭ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৫৮১ কোটি ৯০ লাখ টাকা) খরচ করে এক মনোরম প্রাসাদ গড়ে তুলেছিলেন ব্রিটিশ ডেভেলপার প্যাট্রিক ডাইটার। বিনা অনুমতিতে বানানোয় সেই প্রাসাদ ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাকে।
২০২২ সালের জুন মাসেও যদি প্রাসাদটি সরিয়ে ফেলা না হয়, তাহলে দিনপ্রতি প্রায় ৫০ হাজার ৮৩৬ টাকা জরিমানা গুনতে হবে ডাইটারকে, যা বছরপ্রতি দাঁড়াবে প্রায় ১ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
এক দশকেরও বেশি সময় আগে নিজের নামে ‘সাতু ডাইটার’ প্রাসাদ গড়ে তোলেন ডাইটার। কিন্তু ফ্রান্সের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ এটি সম্পর্কে সম্প্রতি তাদের চূড়ান্ত রায় জানিয়ে দিয়েছেন: প্রাসাদটি সরাতেই হবে। ৩২ হাজার স্কয়ার ফুটের ওই প্রাসাদ পুরোপুরি সরাতে মাত্র ১৮ মাস সময় পাবেন ডাইটার।
আমদানিকৃত ইতালিয়ান পাথর দিয়ে ২০০৫ থেকে শুরু করে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এ প্রাসাদ বানাতে ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ ডাইটার ব্যয় করেছেন বলে জানিয়েছে ডেইলি মেইল।
মোনাকোর কাছাকাছি অবস্থিত প্রাসাদটিতে রয়েছে দুটি হেলিপ্যাড, একটি সল্ট ওয়াটার সুইমিং পুল, একটি মধ্যযুগীয় ক্লইস্টার, একটি বেল টাওয়ার ও একটি গ্রিনহাউস। আরও রয়েছে ১৭ একর জায়গাজুড়ে বিভিন্ন বাগান, আঙুরক্ষেত, জলপাই উদ্যান ও লিলি পন্ড। প্যাট্রিক ডাইটার এর সেই প্রাসাদ নিয়ে এই ছবিঘর।
১৮ শয়নকক্ষের ওই প্রাসাদজুড়ে রয়েছে ঝাড়বাতি, পঞ্চদশ শতকের ফায়ারপ্লেস ও দেয়ালচিত্র। একটি অভ্যর্থনা কক্ষ, একটি লাইব্রেরি, একটি স্ক্রিনিং রুম, বেশ কিছু লাউঞ্জ, কয়েকটি ডাইনিং রুম, একটি স্টিম রুম, একটি স্টাফ কিচেন এবং একটি ভূগর্ভস্থ কামরাও রয়েছে ওখানে।
গত ১৫ বছর ধরে বাড়িটিতে একটি টিভি সেট, একটি ওয়েডিং ভেনু এবং একটি ভ্যাকেশন স্পটও রয়েছে, যেগুলো রাতপ্রতি ৩০০ থেকে ১০০০ ডলারে ভাড়া দেওয়া হয়। অন্যদিকে, ১৮টি শয়নকক্ষের আটটিতেই রয়েছে একটি করে ব্যক্তিগত বাগান বা টেরেস এবং একটিতে রয়েছে দেয়ালচিত্রে ঢাকা সিলিং।
শহরটির মেয়রের কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়েই প্রাসাদটি বানিয়েছেন ডাইটার। তবে আনুষ্ঠানিক অনুমতিপত্র হাতে পাওয়ার আগেই এটির নির্মাণ কাজ তিনি শুরু করেছিলেন বলে জানা যায়। অন্যদিকে, তার প্রাসাদটিতে যা কিছু রয়েছে, সবগুলোর ব্যাপারে অনুমতি ছিল না; বরং ওই জমিনে তাকে স্রেফ ২ হাজার স্কয়ার ফুটের একটি খামারবাড়ি করারই অনুমতি দেওয়া হয়েছিল বলে খবর প্রকাশ করেছে এয়ারমেইল।
এত শখের প্রাসাদ ভাঙার ব্যাপারে ডাইটার অবশ্য ফরাসি আদালতের রায় মেনে নিতে রাজি নন। এয়ারমেইল আরও জানিয়েছে, তিনি ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটসের দ্বারস্থ হবেন।
এমন খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন একজন স্থানীয় কর্মকর্তা। তিনি বলেন, 'এ খুবই হাস্যকর ব্যাপার। প্যাট্রিক ডাইটারের মানবাধিকার তো কেউ হরণ করেনি। তবে এই আইনি পদক্ষেপের ব্যাপারে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তার রয়েছে।'
এদিকে, ২০২২ সালের জুন মাসেও যদি প্রাসাদটি সরিয়ে ফেলা না হয়, তাহলে দিনপ্রতি ৬০০ ডলার (প্রায় ৫০ হাজার ৮৩৬ টাকা) জরিমানা গুনতে হবে ডাইটারকে, যা বছরপ্রতি দাঁড়াবে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার ডলার (প্রায় ১ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা)। অবশ্য এ টাকা জরিমানা দেওয়ার সামর্থ্য বেশ ভালোই রয়েছে এই ধনকুবেরের।
আপনার মতামত জানানঃ