২৮ মে বুধবার জনারণ্য রাজধানীর নয়াপল্টন-কাকরাইল-ফকিরাপুল এলাকা। অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিএনপির চার বিভাগের তারুণ্যের সমাবেশ। সিনিয়র নেতাদের বক্তৃতার পর লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এইদিন অনেকটা জোরের সাথে বললেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতেই হবে। নির্বাচন নিয়ে আগের চেয়ে অনেক শক্তভাবেই কথা বলেন তারেক রহমান।
এদিকে যখন বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশ চলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তখন জাপানে। তারেক রহমান যখন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইছেন, তখন আবারো ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলছেন প্রধান উপদেষ্টা। আরো এক ধাপ এগিয়ে এবার তিনি বলেছেন, সব দল নয়- শুধু একটি দলই ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়। আগে কখনো নির্বাচন নিয়ে এভাবে সরাসরি বিএনপিকে ইঙ্গিত করে কথা বলেননি ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে রাজনৈতিক মহলে তৈরি হয়েছে নতুন অস্বস্তি।
এর আগে নির্বাচন, করিডোর ও সংস্কার নিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর সাথে দূরত্ব তৈরি হয়েছিলো। তখন ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে- একথা বলেছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ জামান। সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অফিসার্স অ্যাড্রেসে সংস্কার ও করিডোর নিয়ে মতামত জানিয়েছিলেন তিনি। তখনই রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দেয় গুমোট পরিস্থিতি। এরপর বিএনপি-জামায়াত-এনসিপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। দৃশ্যত নিজের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন আদায় করে নিয়েছিলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকের পর সেনাপ্রধানের সাথে দেখা করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ তাহের। পরে সংবাদ মাধ্যমকে তারা জানান, সরকারের সাথে সশস্ত্র বাহিনীর সমন্বয়-সমঝোতার আলোচনা করে এসেছেন তারা।
প্রধান উপদেষ্টার সাথে রাজনৈতিক দলের বৈঠকের পর দৃশ্যত সশস্ত্র বাহিনীর সাথে সরকারের সমন্বয়হীনতা কেটে গেছে। তবে এবার নির্বাচন নিয়ে সরাসরি মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছে সরকার ও বিএনপি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের দুদিন পর নির্বাচন নিয়ে নিজেদের হতাশার কথা জানান বিএনপির সিনিয়র নেতারা। অবশ্য হতাশা জানানো এবারই প্রথম নয়। এর আগেও ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে হতাশার কথা জানিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তবে এবারের প্রেক্ষাপট ছিলো ভিন্ন। সেনাপ্রধানের অফিসার্স অ্যাড্রেসের পর প্রধান উপদেষ্টা নাকি পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। একথা তিনি নিজের মুখে না বললেও তার সাথে দেখা করে এসে জানিয়েছিলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এর পরপরই রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক। এতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি বিএনপির সমর্থন আশা করেছিলো অন্তর্বর্তী সরকার। বিএনপি সেই আশা পূরণ করেছে, বলেছে তারা প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায় না।
বিনিময়ে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ আশা করেছিলো বিএনপি। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি। এ কারণে নিজেদের হতাশা প্রকাশের দিন প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জনটিকে নাটক বলে আখ্যা দেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ।
বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিনিয়র নেতারা। নির্বাচনের রোডম্যাপ না দেয়াকে ক্ষমতা ধরে রাখার লোভ বলে বর্ণনা করেন তারা। সংস্কার নিয়ে সরকারের কার্যক্রমকে নির্বাচন পেছানোর কৌশল বলেও আখ্যা দেন বিএনপি নেতারা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও পরোক্ষভাবে সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
তবে রাজনীতির মাঠে সবচেয়ে বড় দল বিএনপির দাবিকে শুরু থেকেই আমলে নিতে চাইছে না অন্তর্বর্তী সরকার। গেলো নয় মাস সেটি সরাসরি না বললেও এবার জাপানে গিয়ে সেকথা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। একটি দল ছাড়া কেউ ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় না, তাই একটি দলের দাবির গুরুত্বও কম।
বিএনপি আগে নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামার হুমকি দিলেও এখন পর্যন্ত কোন কর্মসূচি দেয়নি। নির্বাচন আদায়ে বিএনপি আন্দোলন শুরু করলে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠবে দেশের রাজনীতি। আর তেমন পরিস্থিতিতে ঘটে যেতে পারে ভিন্ন রকম কিছু- সেই আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আপনার মতামত জানানঃ