গত ফেব্রুয়ারিতে দেশজুড়ে মোট ৫৯৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৭৮ জন, আর আহত হয়েছেন ১ হাজার ৩২৭ জন। এ সব দুর্ঘটনার ৪০ ভাগেরও বেশি ঘটেছে মোটরসাইকেলে। পুরো মাসে ২৪১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২২৭ জন, যা মোট নিহতের ৪০ শতাংশের মতো।
শনিবার (৮ মার্চ) দুপুরে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের পাঠানো ফেব্রুয়ারি মাসের দুর্ঘটনার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়। দেশের ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে তারা।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, ৫৯৬ দুর্ঘটনার মধ্যে ২০৯টি (৩৫.০৬ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ২৬৮টি (৪৪.৯৬ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৭৩টি (১২.২৪ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে এবং ৪৬টি (৭.৭১শতাংশ) শহরের সড়কে ঘটেছে।
এসব দুর্ঘটনার মধ্যে ১৪২টি (২৩.৮২ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২৫৩টি (৪২.৪৪ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১২১টি (২০.৩০ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৬২টি (১০.৪০ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৮টি (৩.০২ শতাংশ) অন্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনার হার ৩৪.৩৯ শতাংশ, প্রাণহানি ৩৪.২৫ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১০.২৩ শতাংশ, প্রাণহানি ১২.১১ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৮.১২ শতাংশ, প্রাণহানি ১৭.৮২ শতাংশ, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ৯.৮৯ শতাংশ, প্রাণহানি ৮.৬৫ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.৭০ শতাংশ, প্রাণহানি ৫.৮৮ শতাংশ, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৬ শতাংশ, প্রাণহানি ৬.৪০ শতাংশ, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৮.৩৮ শতাংশ, প্রাণহানি ৮.৩০ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.২১ শতাংশ, প্রাণহানি ৬.৫৭ শতাংশ ঘটেছে।
বিভাগগুলোর মধ্যে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ২০৫টি দুর্ঘটনায় ১৯৮ জন নিহত হয়েছেন। আর বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম ৩৪টি দুর্ঘটনায় ৩৪ জন নিহত হয়েছেন।
একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় ৪১টি দুর্ঘটনায় ৪৮ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম মৌলভীবাজার জেলায়। এই জেলায় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানি ঘটেনি। আর রাজধানী ঢাকায় ৩৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত এবং ৩৬ জন আহত হয়েছে।
এ সব দুর্ঘটনার জন্য ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি ও গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজিকে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে রয়েছে— দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি, চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা (সার্ভিস রোড) তৈরি, পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়কের ওপর চাপ কমানো, টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং “সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
আপনার মতামত জানানঃ