তৈরি পোশাকের নতুন বা অপ্রচলিত বাজার হিসেবে পরিচিত দেশগুলোতে রপ্তানির গতি বেশ ধারাবাহিক। স্থানীয় কিংবা বৈশ্বিক সব প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই রপ্তানি বাড়ছে এসব দেশে। অন্তত তিনটি বাজারে পোশাক রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
রপ্তানিকারক উদ্যোক্তারা বলছেন, এ তিন বাজারে রপ্তানির পরিমাণ প্রধান বাজারগুলোর কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া সম্ভব। বর্তমানে এক বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাজার দাঁড়িয়েছে ১০টিতে।
দেশের রপ্তানি খাত একক পোশাকপণ্য নির্ভর। পণ্যের মতো প্রচলিত বাজারের প্রতি অতিনির্ভরতার ঝুঁকি রয়েছে। ঝুঁকি এড়াতে অপ্রচলিত বাজার সম্প্রসারণে উদ্যোগ আছে উদ্যোক্তাদের। অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানিতে ৪ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দিয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, অপ্রচলিত বড় তিন বাজার হচ্ছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। সমাপ্ত ২০২৪ সালে জাপানে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১২ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় এ পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, জাপানে নিট গেঞ্জিজাতীয় পোশাক এবং ওভেন শার্ট, প্যান্ট জাতীয় পোশাকের রপ্তানি প্রায় সমান। বড় বাজার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় ওভেনের চাহিদা বেশি। অন্য দুই বাজারের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি হয়েছে ৮৩ কোটি ডলারের পোশাক। ভারতে রপ্তানির পরিমাণ ৬১ কোটি ডলার। এই দুই বাজারের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় নিট রপ্তানি এবং ভারতে ওভেন রপ্তানির পরিমাণ বেশি।
রপ্তানি প্রবণতা বলছে, খুব দ্রুত এই দুই বাজারও রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। রপ্তানিকারক উদ্যোক্তারাও একই কথা বলছেন। জানতে চাইলে বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক এবং ডেনিম এক্সপার্টের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সমকালকে বলেন, অতিমারি করোনার অভিঘাতে প্রচলিত পশ্চিমা দেশগুলোতে পোশাকের চাহিদা কমছিল। বিকল্প হিসেবে এশিয়ার উদীয়মান দেশগুলোর অর্থনীতি তুলনামূলক ভালো ছিল। এসব দেশে চাহিদা বেড়েছে। দরও তুলনায় কিছুটা ভালো পাওয়া যাচ্ছে। আবার এশিয়ার দেশ হওয়ার লিড টাইমের সুবিধা অর্থাৎ রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর পণ্য প্রস্তুত করে ক্রেতার হাতে পৌঁছাতে কিছুটা কম সময় লাগে। সব মিলিয়ে নতুন বাজারে মনোযোগ বেড়েছে উদ্যোক্তাদের।
তিনি বলেন, নতুন বাজারের মধ্যে রাশিয়াও বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো বড় বাজার। এ রকম সম্ভাবনাময় দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ এবং দেশের পোশাক খাতের ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়াতে কূটনৈতিক তৎপরতা থাকতে হবে। রোডশো, মেলা ও প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ধরনের দেশগুলোর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশের পোশাকের প্রচলিত এবং প্রধান বাজার হচ্ছে ২৭ জাতির জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। এসব দেশ দিয়েই রপ্তানি শুরু হয় পোশাকের। এখনও মোট পরিমাণের হিসাবে এসব দেশেই রপ্তানি বেশি হয়ে থাকে। এই তিন দেশের বাইরের বাকি দেশগুলোকে অপ্রচলিত বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে ১৮ দেশে বেশি রপ্তানি হয়ে থাকে। এর মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, চীন, রাশিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কোরিয়া ও ভারতে রপ্তানি সবচেয়ে বেশি। গত বছর তৈরি পোশাকের মোট রপ্তানি আয়ে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানির হিস্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ৬৩৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে এসব দেশে।
রপ্তানির তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা যায়, বর্তমানে এক বিলিয়ন ডলারের বাজারগুলোর মধ্যে একক দেশ হিসেবে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যু্ক্তরাজ্য ও কানাডা। এ ছাড়া ইইউ জোটের দেশ হিসেবে এক বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাজার হচ্ছে ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, ডেনমার্ক, স্পেন ও পোল্যান্ড।
আপনার মতামত জানানঃ