গত ১০ বছরে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ২৯৮ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ৫ হাজার ৬১৭ জন। শুধু গত এক বছরের হিসাবে এ সংখ্যা যথাক্রমে ৭০৭ ও ২৯২।
গত ১০ বছরে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ২৯৮ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ৫ হাজার ৬১৭ জন। শুধু গত এক বছরের হিসাবে এ সংখ্যা যথাক্রমে ৭০৭ ও ২৯২। এ সময়ে কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন ১১৩ জন শ্রমিক।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শীর্ষস্থানীয় ১৩টি দৈনিকের সংবাদ বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির (এসআরএস) জরিপ বলছে, সারা দেশে গত এক বছরে কর্মক্ষেত্রে ৬৩৯টি দুর্ঘটনায় ৭৫৮ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়ার পথে যেসব শ্রমিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তাদেরও এ জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বিলসের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ২৭৩ শ্রমিকের মৃত্যু হয় পরিবহন খাতে। এর পরই রয়েছে কৃষি খাত। এ খাতে নিহত হন ১০২ জন। নির্মাণ খাতে নিহত হন ৯১ জন। এছাড়া ৪৩ জন রিকশা শ্রমিক, ৩৮ প্রবাসী শ্রমিক, ৩২ দিনমজুর, বিদ্যুৎ খাতে ২২ জন, ১৯ মৎস্য শ্রমিক, জাহাজ ভাঙা শিল্প ও স্টিলমিলে ৯ করে ১৮, নৌ-পরিবহন খাতে ৮, অক্সিজেন কারখানায় ৭, উৎপাদনে ৬, হোটেল-রেস্টুরেন্টে, রাইস মিল, ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ ও দোকানে পাঁচজন করে শ্রমিক নিহত হন। অন্যান্য খাতে নিহত হন ২৭ জন শ্রমিক।
এ বছর কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় আহত ২৯২ শ্রমিকের সবাই পুরুষ। এছাড়া ৫৫ জন শ্রমিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিখোঁজ হন, যার মধ্যে অধিকাংশই মৎস্য শ্রমিক।
দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে সড়ক, দেয়াল বা ছাদ ধসে পড়া, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, অগ্নিকাণ্ড, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, বজ্রপাত, বিষাক্ত গ্যাস, নৌ দুর্ঘটনা, উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া, পড়ন্ত বস্তুর আঘাত, বিস্ফোরণ, সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়ে, নৌকা বা ট্রলার ডুবি, বন্যপশুর আক্রমণ ইত্যাদিকে চিহ্নিত করেছে বিলস।
২০২৪ সালে কর্মক্ষেত্রে ২২৯ জন শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে বিলস। এর মধ্যে ১১৩ জনই নিহত হয়েছেন। বাকিদের মধ্যে ১০০ জন আহত, ১৫ জন নিখোঁজ, একজনের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করা হয়। নির্যাতিতদের মধ্যে ১৯৩ জন পুরুষ ও ৩৬ জন নারী শ্রমিক ছিলেন।
গতকাল এসআরএসের নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২৩ সালে সারা দেশে ৭৭২টি কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় ৮৭৫ জন শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন। সে তুলনায় গত বছর মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কম।
কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি, ৩৭৯ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন পরিবহন খাতের। ওয়ার্কশপ, গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ ইত্যাদির মতো সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের ১২৯ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। নির্মাণ খাতে নিহত হয়েছেন ৯২ জন, কল-কারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে এ সংখ্যা ৭০ ও কৃষি খাতে ৮৬ জন।
মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৪ জন, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৮১, আগুন এবং বিভিন্ন বিস্ফোরণে ৩০, ওপর থেকে পড়ে ৫০, বজ্রপাতে ৬৯, শক্ত বা ভারী কোনো বস্তুর আঘাতে ২১, পাহাড় বা মাটি, ব্রিজ, ভবন, ছাদ বা দেয়াল ধসে ৭, রাসায়নিক দ্রব্য বা সেপটিক ট্যাংকের গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ১১, পানিতে ডুবে ১৭ ও অন্যান্য কারণে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এসআরএসের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি। কারণ এখানে শুধু পত্রিকায় আসা নিহতের তথ্যগুলো সংকলন করা হয়েছে।’
আপনার মতামত জানানঃ