চলতি বছরের এপ্রিলে গ্রিনল্যান্ডের বরফের ওপর দিয়ে বিমান চালানোর সময় কিছু অসাধারণ তথ্য সংগ্রহ করেছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। আর্কটিক বা উত্তর মেরুতে বরফের নিচে সামরিক ঘাঁটি খুঁজে পেল বিমানটির রাডার স্ক্যানার।
নাসার ‘গালফস্ট্রিম III’ বিমানটির রাডার যন্ত্রটি আর্কটিক বরফের নিচে একটি পরিত্যক্ত ‘শহর’ শনাক্ত করেছে। এটি ছিল স্নায়ুযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন। এটিকে একসময় সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করত ‘ইউএস আর্মি কর্পস অব ইঞ্জিনিয়ার্স’।
অত্যন্ত দূরবর্তী এই সামরিক পোস্টের নাম ক্যাম্প সেঞ্চুরি। এটি বরফের পৃষ্ঠের মধ্যে প্রায় ১৫০ মাইল ভেতরে খোঁড়া হয়েছিল। এটি একটি বিশাল সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক নিয়ে গঠিত। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত এই স্থান পারমাণবিক মিসাইল উৎক্ষেপণের পরীক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।
সম্প্রতি এই রাডার ডেটা থেকে দেখা গেছে যে, বরফ এবং তুষারের ১০০ ফুট পুরু স্তরের নিচে বেশ কিছু কাঠামো বিদ্যমান। গত ৫৬ বছরের মধ্যে জমে ওঠা বরফের নিচে এই কাঠামো অবস্থিত।
এক বিবৃতিতে নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির ক্রায়োস্ফেরিক বিজ্ঞানী অ্যালেক্স গার্ডনার বলেন, ‘বরফের তলানির খোঁজ করছিলাম আমরা এবং হঠাৎ ক্যাম্প সেঞ্চুরি সামনে চলে আসে। প্রথমে জানতাম না এটি কী ছিল।’
নাসার আনহ্যাবিটেড অ্যারিয়েল ভেহিকল সিনথেটিক অ্যাপারচার রাডার (ইউএভিএসএআর) গালফস্ট্রিম III বিমানের পেটের নিচে স্থাপন করা ছিল। এটিই ঘাঁটিটির তথ্য সংগ্রহ করেছে।
নাসার বিজ্ঞানী চ্যাড গ্রিন বলেন, গোপন শহরের পৃথক কাঠামোগুলো নতুন ডেটায় এমনভাবে দেখা যাচ্ছে, যেভাবে আগে কখনো দেখা যায়নি। বিজ্ঞানীরা এই মানচিত্রগুলো ব্যবহার করে অনুমান করছেন যে, বরফের স্তর গলতে শুরু করলে কবে আবার ঘাঁটিটি উন্মুক্ত হবে এবং এই প্রক্রিয়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দ্রুত হচ্ছে।
এই স্থান এই শতকের শেষ নাগাদ উন্মুক্ত হতে শুরু করতে পারে, যা পরিবেশের জন্য অপ্রত্যাশিত পরিণতি ডেকে আনতে পারে। যেমন পারমাণবিক বর্জ্য এবং রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ক্যাম্প সেঞ্চুরির আবিষ্কার ছিল নাসার দলটির জন্য সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। এই মিশনের প্রধান লক্ষ্য ছিল আর্কটিক অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অধ্যয়ন করা।
চ্যাড গ্রিন বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল ইউএভিএসএআরের সক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতা বুঝে, বরফের স্তরের অভ্যন্তরীণ স্তর এবং বরফ তলের সংযোগের মানচিত্র তৈরির জন্য এটি ক্যালিব্রেট, ভ্যালিডেট এবং বোঝা।
তিনি বলেন, ‘বরফের পুরু সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান ছাড়া, বরফের স্তরগুলো দ্রুত গরম হওয়া মহাসাগর এবং বায়ুমণ্ডলের প্রতিক্রিয়া কীভাবে দেখাবে তা জানা সম্ভব নয়। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার পূর্বানুমান করতে আমাদের সক্ষমতা অনেকটাই সীমিত।
আপনার মতামত জানানঃ