বিজ্ঞানীরা যখন পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজেন, তখন তাদের চোখ যে কেবল মহাকাশের দূরের নক্ষত্রমালায় নিবিষ্ট থাকে, তা নয়। তাদের খোঁজার তালিকায় রয়েছে আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলো, এমনকি উপগ্রহও। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, শনির উপগ্রহ এনসেলাডাসের পৃষ্ঠের ভারী আস্তরের নীচে রয়েছে লোনা পানির বরফের সমুদ্র, যা সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়।
গবেষকরা এনসেলাডাসের পৃষ্ঠে ছড়িয়ে থাকা পানিতে প্রাণের বিকাশে মৌলিক ভূমিকা রাখে এমন একটি উপাদানের খোঁজ পেয়েছেন। ক্যাসিনি মিশনের ডেটা বিশ্লেষণ করে তারা খুঁজে পেয়েছেন হাইড্রোজেন সায়ানাইড, তার পাশাপাশি তারা দেখতে পেয়েছেন, উপগ্রহটি প্রাণ বিকাশে সক্ষম এমন রাসায়নিক শক্তির আধারও।
জীবনের সূত্রপাত ঘটানো সেইসঙ্গে বিপাকীয় বিক্রিয়ার মাধ্যমে সেই জীবনকে স্থিতিশীল করার মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু অণু রয়েছে এনসেলাডাসে, এমন প্রমাণ উঠে এসেছে আমাদের সম্প্রতিক পরীক্ষায়,” – এক বিবৃতিতে বলেছেন দলটির মুখ্য গবেষক হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জোনাহ পিটার।
মহাকাশযান ক্যাসিনি ২০০৫ সাল থেকে শুরু করে কয়েকবার এনসেলাডাসকে প্রদক্ষিণ করে সেটির পৃষ্ঠে ছড়িয়ে থাকা পানির আস্তর খুঁজে পায়, যা পৃষ্ঠের নীচে সমুদ্রের উপস্থিতিকে ইঙ্গিত করে বলে প্রতিবদনে লিখেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাময়িকী ডিজিটাল ট্রেন্ডস।
উপগ্রহটির পৃষ্ঠের পানিকে নিয়ে গবেষণা করার পাশাপাশি অনুসন্ধানে পাওয়া ডেটাকে অবিরতভাবে বিশ্লেষণ করে যাচ্ছে মহাকাশযানটি। এর আগে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মতো যৌগের উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারলেও এই প্রথম মিলল হাইড্রোজেন সায়ানাইডের উপস্থিতির প্রমাণ।
এটি প্রাণের সূচনা বিন্দু হিসাবে পরিচিত অ্যামিনো অ্যাসিড সৃষ্টির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক। “হাইড্রোজেন সায়ানাইডের আবিষ্কার খুবই চমকপ্রদ ঘটনা, কারণ প্রাণের উৎপত্তির বেশিরভাগ তত্ত্বেই একে সূচনা বিন্দু হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে,” বলেন পিটার।
দলটি এর আগে উপগ্রহটিতে মিথেনোজেনেসিস বা মিথেন তৈরির রাসায়নিক প্রক্রিয়ার অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। সম্প্রতি দলটি সেখানে জারণের প্রমাণ পেয়েছেন, যা রাসায়নিক শক্তি নির্গমণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
“শক্তির হিসাব করতে গেলে মিথেনোজেনেসিসকে ছোট ঘড়ির ব্যাটারির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, আর সেই তুলনায় এনসেলাডাসের ভূগর্ভস্থঃ সমুদ্রকে বলা যেতে একটি গাড়ির ব্যাটারি, যেটি সেখানে উপস্থিত সম্ভাব্য প্রাণকে বিশাল আকারের শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম,” বলেছেন নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরির ফেলো গবেষক কেভিন হ্যান্ড। এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে নেচার অ্যাস্ট্রনমি সাময়িকীতে।
আপনার মতামত জানানঃ