বিশাল এক ছায়াপথ থেকে আসছে তীব্র রেডিও সংকেত – এমনই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। যেটি তীব্র শক্তির রহস্যময় এক বিস্ফোরণ বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
এ রহস্যময় বিস্ফোরণটি ‘ফাস্ট রেডিও বার্স্ট বা এফআরবি’ নামে পরিচিত। প্রথমবারের মতো এইসব ‘ফাস্ট রেডিও বার্স্ট’-এর দেখা মেলে ২০১৭ সালে।
প্রথমবার এই সংকেত পাওয়ার সময় বিজ্ঞানীরা বলেছেন, শক্তিশালী মাত্রার এসব রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি আলোর খুব ছোট স্পন্দন তৈরির মাধ্যমে মাঝেমধ্যেই আকাশকে আলোকিত করে।
এ ধরনের শক্তিশালী মাত্রার কিন্তু অল্প সময়ের জন্য বিস্ফোরণ ঠিক কী কারণে ঘটেছে তা ওই সময় নিশ্চিত করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। ফলে এ নিয়ে শুরু হয় জল্পনা। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছিলেন, এগুলো কোনো তারা থেকে আসতে পারে, আবার এলিয়েন প্রযুক্তিও হতে পারে এর উৎস।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পৃথিবীতে এসেছে এমন শত শত রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি। গবেষকরা বলছেন, ‘ম্যাগনেটার’ নামে পরিচিত এক শ্রেণির মৃত তারা থেকে এসেছে এসব রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি, যেগুলোতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার চৌম্বক ক্ষেত্র। এ গবেষণায় সেই তত্ত্বেরই প্রমাণ মিলেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
এখন এসব রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি কোথা থেকে আসতে পারে তা নিয়ে আরও সূত্র খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। নতুন গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, ছোট আকারের ছায়াপথের চেয়েও বড় এসব এফআরবি। এমনকি তারা গঠনকারী বিভিন্ন ছায়াপথ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি এগুলোর।
“ম্যাগনেটার-এর অপরিসীম শক্তিই এদের মহাবিশ্বের সবচেয়ে বিস্ময়কর ও চরম বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে একটি করে তুলেছে,” বলেছেন নতুন গবেষণার প্রধান লেখক কৃতি শর্মা।
“বিশাল আকারের তারা’র মৃত্যুর পর ম্যাগনেটার গঠনের কারণ সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। তবে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে সাহায্য করেছে আমাদের এ গবেষণা।”
এসব ম্যাগনেটারের পাশাপাশি এফআরবি বা দ্রুত রেডিও বিস্ফোরণ সম্পর্কেও নানা তথ্য উঠে এসেছে নতুন এ গবেষণায়। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এসব মৃত তারা তৈরি হয়েছে ১০০ট্রিলিয়ন পৃথিবীর সমান শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্রের শক্তি নিয়ে। ফলে দুটি মৃত তারা একসঙ্গে মিশে গিয়ে যে শক্তি তৈরি করে তাতে কোনও সুপারনোভাকেও উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
এর আগে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, সব ধরনের ছায়াপথ থেকে আসতে পারে এফআরবি। তবে এখন তারা বলছেন, কেবল ধাতব সমৃদ্ধ ও অনেক ঘন প্রকৃতির ছায়াপথ থেকে আসতে পারে এমন রেডিও সংকেত। বিভিন্ন ম্যাগনেটারের বেলাতেও একই কথা সত্য, যা সম্ভবত সেইসব ছায়াপথেও দেখা যায় বেশি।
গবেষণাটি করা হয়েছে ‘ডিপ সিনোপটিক অ্যারে-১১০ বা ডিএসএ-১১০’ ব্যবহার করে, যেটি ক্যালটেক বা ‘ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’র মাধ্যমে পরিচালিত এক ধরনের রেডিও অ্যারে টেলিস্কোপ।
মোট ৭টি এফআরবি খুঁজে পাওয়ার পাশাপাশি সেগুলোর স্থানও চিহ্নিত করেছে এই রেডিও অ্যারে এবং এ গবেষণায় ৩০টি এফআরবি নিয়ে পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা।
রেডিও সংকেত কোথা থেকে আসে সে সম্পর্কে আরও জানার আশায় ২০২৮ সালে ‘ডিএসএ-২০০০’ নামে পরিচিত এক নতুন অ্যারে চালু করবেন বিজ্ঞানীরা, যার মাধ্যমে ট্র্যাক করা যাবে আরও বেশি রেডিও সংকেত।
এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার’-এ, ‘প্রেফারেন্সিয়াল ইনসিডেন্স অফ ফাস্ট রেডিও বার্স্টস ইন ম্যাসিভ স্টার-ফর্মিং গ্যালাক্সিজ’ শীর্ষক নিবন্ধে।
আপনার মতামত জানানঃ