শক্তির যে কোন রূপকে অন্য যে কোন রূপে রূপান্তরিত করা যায়, কিন্তু মোট শক্তির পরিমাণ একই থাকে। একে বলা হয় শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি বা শক্তির নিত্যতা সূত্র।
শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতিকে এভাবে বিবৃত করা যায়- শক্তির সৃষ্টি বা বিনাশ নেই, শক্তি কেবল একরূপ থেকে অপর এক বা একাধিকরূপে পরিবর্তিত হতে পারে।
মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয়। শক্তি একরূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তিত হলে শক্তির কোন ক্ষয় হয় না। একটি বা একাধিক বস্তু যে পরিমাণ শক্তি হারায়, অন্য এক বা একাধিক বস্তু ঠিক একই পরিমাণ শক্তি পায়। নতুন করে কোন শক্তি সৃষ্টি হয় না বা কোন শক্তি ধ্বংসও হয়না।
এখন আপাতদৃষ্টিতে মনে হবার কথা, শূন্য থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মহাবিশ্ব তৈরি হওয়াটা শক্তির নিত্যতার লঙ্ঘন। কারণ, নিত্যতার সূত্র অনুযায়ী, শক্তির সৃষ্টিও নেই, ধ্বংস নেই। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে অন্যরকম। স্ফীতিতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করা প্রত্যেক বিজ্ঞানীদের হিসাব মতে, মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরমাণ সব সময়ই শূন্য থাকে।
শক্তির যোগ ফল শূন্য হলে এই পৃথিবী সূর্য, চাঁদ, চেয়ার, টেবিল, ল্যাপটপ, কিংবা আমাদের বাড়িঘর, এমনকি মানবদেহ সহ হাজারো রকমের পদার্থ তাহলে আসলো কোথা থেকে? এরকম প্রশ্ন তৈরি হওয়া অবশ্য অমূলক নয়।
মহাবিশ্বের দৃশ্যমান জড়পদার্থগুলো তৈরি হয়েছে আসলে ধনাত্মক শক্তি থেকে, আর অন্যদিকে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের রয়েছে ঋণাত্মক শক্তি। এই দুটো পরস্পরকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। তাই, মহাবিশ্বের শক্তির বীজগনিতীয় যোগফল হিসেব করলে সবসময় শূন্যই পাওয়া যায়।
ব্যাপারটাকে আরেকটু সহজ করে বলা যাক। মার্কিন বিজ্ঞানী অ্যালান গুথের দেয়া স্ফীতিতত্ত্ব থেকে আমরা জেনেছি আলোক কণা ফোটন কিংবা চেনা জানা পদার্থের আদি উপাদানগুলো তৈরি হয়েছে মেকি শূন্যতা বা ফলস ভ্যাকুয়াম থেকে দশার স্থানান্তরের মাধ্যমে।
স্থান বলে কিছু নেই—পদার্থবিজ্ঞান কী বলে? এই উপাদান গুলোর রয়েছে ধনাত্মক শক্তি। এই শক্তি কাটাকাটি হয়ে যায় মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের ঋণাত্মক শক্তি দিয়ে। কাজেই যে কেউ যে কোন সময় হিসাব মেলাতে বসলে দেখবেন, নীট যোগফল শূন্যই পাচ্ছেন।
উদাহরণস্বরূপ, যত ভারী বস্তু কণা আমরা তৈরি করতে যাব, মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের কাছে আমাদের তত ভারী ট্যাক্স দিতে হবে আগে। অর্থাৎ, মহাবিশ্বের আকার বাড়াতে হলে বিপরীত দিকে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের মানও বাড়াতে হবে।
স্টিফেন হকিং তাঁর বিখ্যাত ‘ইউনিভার্স ইন নাটশেল’-এ বইয়ে বলেন, ‘মহাবিশ্বের আকার দ্বিগুণ হবার অর্থ হল পদার্থ এবং মহাকর্ষীয় শক্তি উভয়েরই দ্বিগুণ হওয়া। দ্বিগুণ করলেও শূন্যই হয়।’ কাজেই, শূন্য থেকে মহাবিশ্বের উৎপত্তি শক্তির নিত্যতার সূত্রের লঙ্ঘন নয়।
আপনার মতামত জানানঃ